আশরাফুল ইসলাম, শেকৃবি প্রতিনিধিঃ
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) গভীর রাতে র্যাগিংয়ের ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে, ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা বারবার ফোন করেও প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর ও ছাত্র পরামর্শকের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেননি।
তবে শিক্ষার্থীদের ফোন পেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ তাৎক্ষণিকভাবে ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
শুক্রবার (১ মার্চ) দিবাগত রাত আনুমানিক ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮২তম ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থী ৮৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের কবি কাজী নজরুল ইসলাম হলের ডাইনিংয়ে নিয়ে গিয়ে র্যাগিং শুরু করেন। এ সময় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের একজন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ সংগঠনের কয়েকজন সদস্যকে খবর দেন।
সংগঠনের সদস্যরা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর, সহকারী প্রক্টর ও ছাত্র পরামর্শককে একাধিকবার ফোন করলেও কেউ সাড়া দেননি। পরে বাধ্য হয়ে তারা উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফকে ফোন করেন।
অভিযোগ পাওয়ার পর তিনি সময় নষ্ট না করে ট্রেজারার অধ্যাপক মো. আবুল বাশারকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী জানান, অভিযুক্তদের পক্ষ হয়ে ছাত্রদল কর্মী রাশেদ আল নাফিস সেখানে উপস্থিত হন। তবে তিনি দাবি করেন, “ওরা আমার হলের জুনিয়র ও এলাকার ছেলে, তাই আমাকে ফোন দিয়েছে। আগে কিছু জানতাম না।
নিচে নামার সময় ভিসি ও ট্রেজারার স্যারের সঙ্গে দেখা হয়, তখনই পুরো ঘটনা জানতে পারি। এরপর আমি ওদের বলেছি, প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা থাকার পরও এসব কাজ করার সাহস ওরা পায় কীভাবে?”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শেকৃবি শাখার আহ্বায়ক মো. আসাদুল্লাহ বলেন, “আমাদের কাছে অভিযোগ এসেছে যে, নির্দিষ্ট রাজনৈতিক প্রোগ্রামে না গেলে শিক্ষার্থীদের র্যাগিংয়ের শিকার হতে হচ্ছে এবং সিট বাতিলের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।
২৩ ব্যাচের কিছু শিক্ষার্থী এসব কর্মকাণ্ডের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। গতকালও রাত ৪টা পর্যন্ত এমন মিটিং চলেছে। তাই আজকের ঘটনা জানতে পেরে আমরা প্রক্টর, প্রভোস্ট ও ছাত্র পরামর্শকদের কল করি, কিন্তু কেউ ফোন রিসিভ করেননি। বাধ্য হয়ে উপাচার্যকে ফোন দিই।”
উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল লতিফ বলেন, “শিক্ষার্থীরা আমাকে ফোন করে র্যাগিংয়ের অভিযোগ জানায়। সঙ্গে সঙ্গে আমি ট্রেজারার মহোদয়কে জানিয়ে দ্রুত বের হয়ে আসি। নজরুল হলে গিয়ে দেখি, ২৩ ও ২৪ ব্যাচের শিক্ষার্থীরা রাত ২টায় মিটিং করছে।
আমি তাদের রুমে পাঠিয়ে দিই। এরপর নবাব সিরাজ উদ-দৌলা হলে গিয়ে দেখি, সেখানে কেউ নেই।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ে আইনশৃঙ্খলা কমিটি রয়েছে। তাদের সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। র্যাগিং কোনোভাবেই বরদাশত করা হবে না, এর বিরুদ্ধে অবশ্যই কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে সম্পূর্ণ র্যাগিংমুক্ত রাখতে চাই।”
এই ঘটনার পর প্রক্টর ও ছাত্র পরামর্শকদের ভূমিকা নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। গভীর রাতে র্যাগিং চলাকালে বারবার ফোন করা হলেও তারা কেন সাড়া দেননি, তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন শিক্ষার্থীরা।