মজনুর রহমান আকাশ, মেহেরপুর
শুধু খাবার হিসেবেই নয় বরং বাঙালির ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে পিঠা। প্রতি শীতেই গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠা পুলির উৎসব। গ্রামীণ ঐতিহ্য ও নতুন প্রজন্মের কাছে হরেক রকমের পিঠার পরিচয় তুলে ধরতে মেহেরপুরের গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজে অনুষ্ঠিত হয়েছে পিঠা উৎসব। আজ বুধবার দিন ব্যাপী অনুষ্ঠিত এ উৎসবে শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা ৩০ টি স্টল সাজিয়েছিলেন শত রকমের বাহারী ও মুখরোচক পিঠা দিয়ে। ভোজন রসিকরাও এসে পিঠা খেয়ে নানা প্রশংসা করছেন। আর আয়োজকরা বলছেন প্রতি বছরই এমন আয়োজন থাকবে নতুন প্রজন্মের কাছে পিঠা পুলির পরিচিতির জন্য।
গাংনী মহিলা ডিগ্রি কলেজ চত্ত্বরে শুরু হওয়া এ পিঠা উৎসবে ছিল বেশ ভিন্নতা। শিক্ষার্থীরা নিজ হাতে তৈরী করা এসব পিঠা সাজিয়েছেন তাদের স্টলে। শোভা পাচ্ছে— স্বতীন পিঠা, বেক্কল জামাই, মেয়েদের মন, জামাইয়ের প্যাচ, ভালবাসার লাল গোলাপ, পিয়াসা, পাটি সাপটা, আন্দসা, চিতই, ভাপা, পুলি, সরু, মালাই রোল, চিটা রুটিসহ ১১১ ধরণের পিঠা সাজানো রয়েছে ৩০টি স্টলে। ভোজন রসিকরা বিভিন্ন স্টল ঘুরে ঘুরে দেখছেন আর স্বাদ নিচ্ছেন। সেই সাথে অনেকে এসেছেন তাদের সন্তানদেরকে পিঠা পুলির স্বাদের পাশাপাশি পিঠার সাথে পরিচয় ঘটাতে।
পিঠা উৎসবের স্টলগুলোর নামের ভিন্নতাও ভোজন রসিকদের আকৃষ্ট করেছে। দেখা গেছে — ছয় সখীর পিঠা ঘর, আমার পিঠা আমার জামাই, দূরে কেনো কাছে এসো, কফি হাউসের সেই আড্ডা…, পিঠার হাড়ি আমার বাড়ি, চুপি চুপি খেয়ে যাও, পিঠা পুলির ঝুলিসহ হরেক রকমের স্টলের নাম । একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুরাইয়া ইয়াসমীন ও আনিকা তাবাচ্ছুম জানান, পিঠা উৎসব পিঠা পুলির সাথে মানুষের পরিচয় করিয়ে দেয়ার মাধ্যম। এ আয়োজনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মরা যেমন হরেক রকম পিঠার সাথে পরিচিত হতে পারছে তেমনি স্বাদ নিতেও ভুলছেন না। এমনি আয়োজন সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের করা উচিৎ। একই কথা জানিয়েছেন দ্বাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী তন্নী ও জ্যামী ইসলাম।
পিঠা উৎসব উপভোগ করতে আসা স্কুল শিক্ষিক জাহাঙ্গীর আলম জানান, বিদেশী অনেক খাবার আমাদের দেশে জায়গা করে নিয়েছে। যার ফলে মায়েদের হাতের অনেক পিঠা বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে। প্রতিবছর পিঠা উসবের আয়োজন করা হলে নতুন প্রজন্ম দেশি পিঠায় পরিচিত হতে পারবে।
কলেজ শিক্ষিকা নিলুফার চৌধুরী জানান, গ্রামাঞ্চলে বিশেষ করে শীতকালে নানা ধরণের পিঠাপুলি তৈরী হয় প্রতিটি বাড়িতে। বাঙালির ইতিহাস ও ঐতিহ্যে পিঠা—পুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে বহুকাল ধরে। পিঠা উৎসবের আয়োজন এটি লোকজ ও নান্দনিক সংস্কৃতিরই বহিঃপ্রকাশ।
পিঠা উৎসবে আসা প্রধান অতিথি প্রীতম সাহা জানান, তারুণ্যের উৎসব উপলক্ষে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে । অনেক পিঠার সাথেই আমাদের পরিচয় হারিয়ে যাচ্ছে। অনেক পিঠার নাম জানা থাকলেও স্বাদ মনে নেই। আজকের এই পিঠা উৎসবে অনেক পিঠা খেয়ে ছোট বেলার অনেক স্মৃতিই মন করিয়ে দেয়। এভাবে শীতভর পিঠা উৎসব হোক গ্রামবাংলার তিটি ঘরে ঘরে।
কলেজের অধ্যক্ষ মোঃ খোরশেদ আলম জানান, শীতের শেষের দিকে হলেও আমরা গ্রামবাংলার ঐতিহ্যবাহি পিঠা নিয়ে পিঠা উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে। এ উৎসবে বিলুপ্তি হওয়া সহ নতুন নতুন পিঠা নিয়ে স্টল সাজানো হয়েছে। নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েসহ বিভিন্ন বয়সের মানুষ পিঠা খেতে এসেছেন। আমাদের এই উৎসবে যারা এসেছেন তাদের দাবীর পেক্ষিতে প্রতিবছরই এমন বর্ণাঢ্য আয়োজন হবে। এছাড়াও উৎসবে পিঠা নিয়ে অংশ গ্রহনকারিদের মাঝে পুরুস্কার বিতরণ করা হবে।