আশরাফুল ইসলাম (শেকৃবি প্রতিনিধি):
রাজধানীর শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শেকৃবি) ৩৫ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যাপক দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গ্রীন হাউজ নির্মাণ, লিফট সরবরাহ ও আসবাবপত্র ক্রয়ের ক্ষেত্রে নিম্নমানের কাজ এবং নিয়ম ভঙ্গের মাধ্যমে বিপুল অর্থ অপচয়ের অভিযোগে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে তদন্ত কমিটির ধীরগতিতে দুর্নীতির সুষ্ঠু বিচার নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নথি বিশ্লেষণ ও সরেজমিনে তদন্তে দেখা যায়, ২০২২ সালে গবেষণার জন্য গ্রীন হাউজ নির্মাণে ১২ কোটি ১০ লাখ টাকা, আবাসিক ভবনে লিফট সরবরাহে ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকা, এবং বিভিন্ন দপ্তরে আসবাবপত্র ক্রয়ে ১৩ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। তবে কার্যাদেশ প্রদানে নিয়ম লঙ্ঘন, অভিজ্ঞতাহীন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি, এবং নিম্নমানের সরঞ্জাম ব্যবহার—এসবই প্রকল্পগুলোতে দুর্নীতির বিষয়টি স্পষ্ট করে তুলেছে।
গবেষণার জন্য গ্রীন হাউজ নির্মাণে নিম্নমানের ৮ মিলিমিটার পলিকার্বনেট শিটের পরিবর্তে পাতলা শিট ব্যবহার, প্রয়োজনীয় ইউনিটগুলোর অচলাবস্থা এবং মানহীন কাজের অভিযোগ উঠে এসেছে। সরেজমিনে দেখা যায়, নির্মাণকাজে ব্যবহারিত উপকরণ এবং কার্যপ্রক্রিয়া চুক্তি অনুযায়ী হয়নি, যা প্রকল্পের উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে।
আবাসিক ভবন ও হলগুলোতে সরবরাহকৃত লিফটগুলো ছোট, চলাচলে ঝনঝন শব্দ করে এবং প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ে। অভ্যন্তরীণ ফ্যান ও লাইট নষ্ট থাকার কারণে ব্যবহারকারীরা আতঙ্কিত। ১০ কোটি ৪০ লাখ টাকার এই প্রকল্পের মান নিয়ে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
এছাড়াও ১৩ কোটি টাকার আসবাবপত্র সরবরাহ প্রকল্পেও ভয়াবহ অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সরবরাহকৃত আসবাবপত্রগুলো অল্প সময়ের মধ্যেই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। কর্মকর্তারা প্রথমে এই আসবাব গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালেও প্রশাসনের চাপে তা গ্রহণে বাধ্য হন।
এসব গুরুতর দূর্নীতির তদন্তে ধীরগতির পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল দপ্তরের অসহযোগিতার অভিযোগ উঠেছে। প্রকল্প সংশ্লিষ্ট নথি চাইলে টালবাহানার অভিযোগ করেছেন সাংবাদিকরা। ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী নথি সরবরাহে অস্পষ্টতা দেখিয়েছেন।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আব্দুল লতিফ বলেন, “বিগত প্রশাসনের নথিপত্র গায়েব করার বিষয়টি তদন্ত কমিটির কাজকে কঠিন করে তুলেছে। তবে আশা করছি, এক মাসের মধ্যে প্রতিবেদন হাতে আসবে।”
শিক্ষক ও কর্মকর্তারা দ্রুত তদন্ত শেষ করে দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন। সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণ করা না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্নীতি আরও বাড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন সংশ্লিষ্টরা।