সাব্বির হোসেন, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
তিস্তা নদীর চরাঞ্চলে সোনালী ভুট্টার চাষে জেগে উঠেছে লালমনিরহাটের অর্থনীতি। শুষ্ক মৌসুমে নদীর বাম তীরজুড়ে জেগে ওঠা ৭২ কিলোমিটার চরাঞ্চলের হাজার হাজার হেক্টর জমিতে এখন দামি এই ফসলের সমারোহ।
জেলার পাঁচ উপজেলার মধ্যে পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালিগঞ্জ ও আদিতমারী—এই চারটি নদীবেষ্টিত উপজেলায় ভুট্টা চাষের প্রবল জোয়ার দেখা গেছে এবার। বিশেষ করে হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তার চরে ব্যাপক হারে ভুট্টার আবাদ হয়েছে, যা স্থানীয় কৃষকদের ঘুরে দাঁড়ানোর প্রধান হাতিয়ারে পরিণত হয়েছে।
ধান ও অন্যান্য ফসলের তুলনায় ভুট্টা চাষে লাভ দ্বিগুণের বেশি হওয়ায় চরের কৃষকরা এখন এ দিকে ঝুঁকছেন। ৩৩ শতাংশের এক বিঘা জমিতে ভুট্টার গড় ফলন ৪০ থেকে ৪২ মণ, যেখানে উৎপাদন খরচ পড়ে ১৪ থেকে ১৬ হাজার টাকা।
বর্তমানে ভুট্টার বাজার মূল্য মণপ্রতি ১,২৩০ থেকে ১,৩৪০ টাকা। ফলে প্রতি বিঘায় নিট লাভ ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে গত কয়েক বছর ধরে চরের কৃষকরা ভুট্টা চাষে মনোনিবেশ করছেন।
হাতীবান্ধা উপজেলার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ৬টি ইউনিয়নের বিস্তীর্ণ চরাঞ্চল তিস্তার করাল গ্রাসে ক্ষতিগ্রস্ত হলেও ভুট্টা চাষই এখন কৃষকদের ভরসা। বন্যার পলি মাটিকে আরও উর্বর করে তোলায় এবার ভুট্টার ফলন আশাজাগানিয়া।
উপজেলার সানিয়াজান ইউনিয়নের কৃষক সুশান্ত সিংহ (৩৫) বলেন, “২.৫ একর জমিতে ভুট্টা চাষে প্রায় ১.৩ লক্ষ টাকা খরচ হবে। ফলন পেলে ২০০-২৩০ মণ ভুট্টা বিক্রি করে লক্ষাধিক টাকা লাভের আশা করছি। তবে বীজ, সারের দাম কম থাকলে লাভ আরও বাড়ত।”
চর সিন্দুর্ণার কৃষক রাজু মিয়া (৫৬), ৪ একর জমিতে ভুট্টা চাষ করে বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার স্বপ্ন দেখছেন। বলেন, “গেলোবার বন্যায় আমার অনেক ক্ষতি হয়েছে, এবার ভুট্টা চাষের মাধ্যমে সে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়ার চেষ্টা করতেছি।”
উপজেলা কৃষি অফিস চরাঞ্চলের কৃষকদের প্রশিক্ষণ, পরামর্শ ও প্রণোদনা দিয়ে ভুট্টা চাষে উদ্বুদ্ধ করছে। হাতীবান্ধা উপজেলায় এবার ১৪,৬৯০ হেক্টর জমিতে ভুট্টার আবাদ হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কার্তিক কুমার জানান, “ভুট্টা লাভজনক হওয়ায় চরের কৃষকরা এ দিকে ঝুঁকছেন। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং ন্যায্য বাজারমূল্য পেলে চরের অর্থনীতি আরও গতিশীল হবে।”
ভুট্টা চাষে চরাঞ্চলের এককালের নিঃস্ব মানুষের মুখেও এখন আর্থিক স্বাচ্ছন্দ্যের ছাপ। অনেকের ভাগ্য বদলে গেছে, বাড়ছে জীবনযাত্রার মান। স্থানীয় কৃষকদের মতে, ভুট্টার সোনালী দানা এখন চরের অর্থনীতির নতুন ইঞ্জিন।
সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে সহযোগিতা বাড়লে এ অঞ্চল কৃষিতে আরও মডেল হয়ে উঠতে পারে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনি মনে করেন?