চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি:
চুয়াডাঙ্গায় মাইকিং শুরু করে দিয়েছে ব্যবসায়ীরা। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত নিত্যপণ্যের দাম চলমান হারে ঠিক থাকলেও পরদিন শুক্রবার (১৪ ফেব্রুয়ারী) পবিত্র শবে বরাতের দিন আর ছাড় দেয়নি ব্যবসায়ীরা। সেদিন রোজার ১৪ দিন বাকী থাকলেও বাজারে নিত্যপণ্যের সাথে অলরেডি দাম বাড়িয়ে দিয়েছে রমজান পণ্যের। যার অন্যতম পণ্য হিসেবে সয়াবিন তেল প্রকৃত পক্ষে সঙ্কট না থাকলেও কৃত্রিমভাবেও সঙ্কট দেখাচ্ছে অসাধু ব্যবসায়ীরা।
বাজারে ৫ লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল শর্তসাপেক্ষে পাওয়া গেলেও এক ও দুই লিটার বোতলের সয়াবিন তেল একেবারেই পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে, ৫ লিটারের সয়াবিন কেনার সামর্থ্য না থাকায় সাধারণ ভোক্তারা পড়েছে বড় বিপদে। রমজানের আরমাত্র ৪/৫ দিন পর শুরু হবে ভোজ্যষ জিনিসপত্র তৈরীর প্রস্তুতি। অথচ ১৪/১৫ দিন আগে থেকে সয়াবিন তেল উধাও হয়ে গেছে চুয়াডাঙ্গার বাজার থেকে।
সরকারের ব্যর্থতাকে কাজে লাগিয়ে প্রতিবছরের ন্যায় এবারও রমজানকে সামনে রেখে সি-িকেটধারী ব্যবসায়ীরা তাদের অপকর্ম শুরু করে দিয়েছে।
এতে করে সাধারণ ভোক্তাদের মনে যেমন নানা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে তেমনী ভোক্তাপর্যায়ে বাড়িয়ে তুলেছে হতাশা।
এদিকে, রোজার মাত্র ৪/৫ দিন বাকি রয়েছে। এরই মধ্যে বাজার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সরকার চ্যালেঞ্জের মধ্যে থাকলেও এখন পর্যন্ত বাজার স্বাভাবিক করতে পারেনি। বরং দেশে নানা অস্থিরতায় নানা অপরাধসহ চাঁদাবাজি বেড়ে যাওয়ায় নিত্যপণ্যের দামও ভারি হচ্ছে দিন দিন। অথচ জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের কার্যক্রম স্বাভাবিকই রয়ে গেছে। যে কারণে অসাধু ব্যবসায়ীরা ভয়কে উপেক্ষা করে এবারও রমজানকে টার্গেট করেছে ব্যবসায়ীরা। সেকারণে রমজানকে সামনে রেখে অসাধু ব্যবসায়ীদেরকে সামলাতে ভোক্তা অধিকারসহ জেলা প্রশাসনের কড়া নজরদাড়ি রাখা জরুরী হয়ে দেখা দিয়েছে।
তবে বাজার করতে এসে ভোক্তারা বারবারই দুষছেন সংশ্লিষ্ট অধিদফতরকে। তারা বলছেন তাদের অবহেলার কথা। তারা ক্ষমতার অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও অসাধু ব্যবসায়ীরা কীভাবে জিনিসের দাম বাড়ায় এ নিয়েও ভোক্তারা সংশ্লিষ্টদের সন্দেহের চোখে দেখছেন এখনও।
এদিকে, বাজার নিয়ন্ত্রণে অযোগ্য প্রমাণিত হওয়ায় বড় বাজার ব্যবসায়ীরা রোজার আগে থেকেই বাড়িয়ে তুলেছে লোভ। যে কারণে গতকাল শুক্রবার থেকেই রমজান পণ্যসহ বাড়িয়ে দিয়েছে নিত্যপণ্যের দাম।
তবে এই ৫ লিটার বোতলের তেল কিনতে হলে ক্রেতাদের নিতে হবে বাড়তি আরেকটি পণ্য। গত কয়েকমাস ধরে এক লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭৫ টাকায়। আর ৫ লিটার তেলের দাম ৮৫০ টাকা। গতকাল শুক্রবার চুয়াডাঙ্গা শহরের বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
জানা গেছে, গত সপ্তাহের বেশি সময় ধরেই চুয়াডাঙ্গার বাজার থেকে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে না। এক লিটার ও দুই লিটারের বোতল নেই বললে চলে। তবে কিছু কিছু দোকানে ৫ লিটারের সয়াবিন তেল পাওয়া গেলেও প্রয়োজন না হলেও কোম্পানির শর্তসাপেক্ষে কিনতে হচ্ছে অন্যান্য পণ্য। কোম্পানির শর্তের বেড়াজালে বন্দি হয়ে পড়েছে খুচরা ব্যবসায়িরা। আর যত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ ভোক্তাদের। এমন সংকট শুধু বাজারে নয়। বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট দেখা দিয়েছে সুপার শপগুলোতেও। তবে পর্যাপ্ত মজুদ আছে খোলা সয়াবিন তেলের।
খুচরা ব্যবসায়িদের অভিযোগ করে বলছেন, ডিলার পর্যায়ের ব্যবসায়িরা বাজারে তেলের সংকট দেখাচ্ছেন। ফলে সয়াবিন তেলশূন্য হয়ে যাচ্ছে বাজারের দোকান গুলোতে।
বাজারের খুচরা মুদি ব্যবসায়িরা জানান, এক ও দুই লিটার তেল একদমই নেই। যদিও বা ৫ লিটার তেল কোম্পানি দিচ্ছে-কিন্তু এই তেলের সাথে এক কেজি পোলাও চাল ৫ কেজি প্যাকেট আটা কিংবা অন্যান্য পন্য কিনতে হচ্ছে। এই পণ্যগুলো না নিলে সয়াবিন তেল দিচ্ছে না কোম্পানির প্রতিনিধিরা। এদিকে, ক্রেতারা তেলের সাথে কন্ডিশন পণ্যগুলো নিচ্ছে না। যে কারণে বাড়তি পণ্যগুলো দোকানে পড়ে থাকছে। মূলত কোম্পানিই এই কারসাজিগুলো করছে।
অথচ সয়াবিন তেল কিনতে ব্যবসায়ীরা কোনো শর্ত দিয়ে অন্যান্য পণ্য কিনতে বাধ্য করলে কঠোর ব্যবস্থাসহ জরিমানার নির্দেশনা দিয়েছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান।
বাজারে আসা এক ক্রেতা রাব্বি হোসেন বলেন, বাজারে এসে এক ও দুই লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল পেলাম না। যদুও বা ৫ লিটার তেল পেলাম তবে শর্ত অনুযায়ি নিতে হলো পোলাও চাল, আটা, সরিষার তেল। কিন্তু আমার এই বাড়তি পণ্যের প্রয়োজন নেই। এভাবে তেল সংকট থাকলে রোজার মাসে বিপদ হয়ে যাবে।
আরেক ক্রেতা হাসিবুর রহমান বলেন, সুপারশপ ঘুরে বাজারে আসলাম তবুও পেলাম না বোতলজাত সয়াবিন তেল। এরকমভাবে বাজারে কৃত্রিম সংকট দেখানোর কারণ কি? আবার কি বাড়তে পারে তেলের দাম? এজন্য প্রশাসনের অভিযান প্রয়োজন। সামনে রোজার মাস তাই আগে থেকেই বাজার তদারকি করতে হবে।
এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের অধিদপ্তরের সহকারি পরিচালক মোহাম্মদ মামুনুল হাসান বলেন, বাজারে এক ও দুই লিটার তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। তবে এই সংকট কাটানোর জন্য ইতিমধ্যে ডিলার ব্যবসায়িদের সাথে আলোচনা হয়েছে। এছাড়া বাজার তদারকি আরও বাড়ানো হয়েছে। রোজার মাসে যেন তেলের সংকট দেখা না দেয় সেজন্য বাজার মনিটরিং অব্যহত আছে।