বাংলাদেশের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিয়েছেন। তিনি তার ফেসবুক পেজে এই ঘোষণা দেন। তামিম বলেন-
“আমি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে আছি। এই দূরত্ব আর কমবে না। আমার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অধ্যায় শেষ।”
তামিম ইকবাল তার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ক্যারিয়ার শুরু করেন ২০০৭ সালে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ওয়ানডে ম্যাচ দিয়ে। এরপর তিনি ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট ম্যাচ দিয়ে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক করেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার অভিষেক হয় ২০০৭ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে।
তামিম ইকবালের ক্যারিয়ারের কিছু উল্লেখযোগ্য অর্জন:
- টেস্ট ক্রিকেটে ৭০টি ম্যাচে ৫১৩৪ রান, ১০টি সেঞ্চুরি এবং ৩১টি হাফ-সেঞ্চুরি।
- ওয়ানডে ক্রিকেটে ২৪৩টি ম্যাচে ৮৩৫৭ রান, ১৪টি সেঞ্চুরি এবং ৫৬টি হাফ-সেঞ্চুরি।
- টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ৭৮টি ম্যাচে ১৭৫৮ রান, ১টি সেঞ্চুরি এবং ৭টি হাফ-সেঞ্চুরি।
- ২০১১ সালে উইজডেন ক্রিকেটার অফ দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন।
- ২০১৬ সালে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হন।
- বাংলাদেশের হয়ে একমাত্র ক্রিকেটার যিনি তিন ফরম্যাটেই সেঞ্চুরি করেছেন।
তামিম ইকবালের ক্যারিয়ার পরিসংখ্যান-
ফরম্যাট | ম্যাচ | ইনিংস | NO | রান | HS | Ave | BF | SR | 100s | 50s | চার | ছয় | Ct | St |
---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|---|
টেস্ট | ৭০ | ১৩৪ | ২ | ৫১৩৪ | ২০৬ | ৩৮.৮৯ | ৮৮৫২ | ৫৭.৯৯ | ১০ | ৩১ | ৬৫৫ | ৪১ | ২০ | ০ |
ওডিআই | ২৪৩ | ২৪০ | ১২ | ৮৩৫৭ | ১৫৮ | ৩৬.৬৫ | ১০৬৪২ | ৭৮.৫২ | ১৪ | ৫৬ | ৯২৫ | ১০৩ | ৬৮ | ০ |
টি২০আই | ৭৮ | ৭৮ | ৫ | ১৭৫৮ | ১০৩* | ২৪.০৮ | ১৫০৩ | ১১৬.৯৬ | ১ | ৭ | ১৮৮ | ৪৫ | ১৮ | ০ |
এফসি | ১০৪ | ১৯৩ | ৯ | ৭৯৪৫ | ৩৩৪* | ৪৩.১৭ | – | – | ১৭ | ৪৪ | – | – | ৩৫ | ০ |
লিস্ট এ | ৩১৬ | ৩১৩ | ১৭ | ১১৩৬৮ | ১৫৮ | ৩৮.৪০ | ১৩৯৫৭ | ৮১.৪৫ | ২২ | ৭২ | – | – | ৮৮ | ০ |
টি২০ | ২৭২ | ২৭১ | ২৬ | ৮০৩১ | ১৪১* | ৩২.৭৭ | ৬৬২২ | ১২১.২৭ | ৪ | ৫২ | ৮৩৭ | ২৫২ | ৮৩ | ০ |
সংক্ষেপ শব্দের পূর্ণরূপ:
- NO: নট আউট (অপরাজিত)
- HS: হাইস্কোর
- Ave: গড় (Batting Average)
- BF: বোলিং ফেস
- SR: স্ট্রাইক রেট (Strike Rate)
- 100s: শতক (Centuries)
- 50s: অর্ধশতক (Half-Centuries)
- Ct: ক্যাচ (Catches)
- St: স্টাম্প (Stumpings)
তামিম ইকবালের কিছু স্থিরচিত্র –




তামিম ইকবাল এর আগে ২০২৩ সালের জুলাই মাসে এক আবেগঘন সংবাদ সম্মেলনে অবসর ঘোষণা করেছিলেন, কিন্তু বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সেই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করেন।
তামিম তার সিদ্ধান্তের কথা সিলেটে বাংলাদেশ নির্বাচকদের জানান। গাজী আশরাফ হোসেনের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন প্যানেল তাকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির জন্য বাংলাদেশ দলে ফিরে আসার অনুরোধ করেন। তামিম তখন তাদের বলেছিলেন যে তিনি অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল থাকবেন, কিন্তু কিছু বাংলাদেশি খেলোয়াড়, বিশেষ করে অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত, তাকে পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ করার পর তিনি একদিন বেশি সময় নেন।
“আমি দীর্ঘদিন ধরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে দূরে আছি,” তিনি ফেসবুকে লিখেছেন।
“এই দূরত্ব থাকবে। আমার আন্তর্জাতিক ক্রিকেট অধ্যায় শেষ। আমি দীর্ঘদিন ধরে এ নিয়ে ভাবছি। এখন চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির মতো একটি বড় ইভেন্ট আসছে, আমি কারও মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দু হতে চাই না, যা দলের মনোযোগ হারাতে পারে। অবশ্যই, আমি আগে এটি ঘটতে চাইনি।”
চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির স্কোয়াড ঘোষণা করার সময়সীমা ১২ জানুয়ারী এবং বিসিবি তামিম খেলতে চান কিনা তা দেখতে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করতে চেয়েছিল। তামিম তার ঘরোয়া ফর্ম এবং ফিটনেসের জন্য প্রতিযোগিতায় ছিলেন। তারপর থেকে তিনি কোনো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেননি কিন্তু ঘরোয়া ক্রিকেট খেলা চালিয়ে গেছেন, যার মধ্যে বরিশাল ফ্র্যাঞ্চাইজির সাথে ২০২৪ বিপিএল জেতা এবং টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে শেষ করা। তিনি ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ভালো করেছেন এবং তারপর ঘরোয়া এনসিএল টি-টোয়েন্টিতে আরও রান করেছেন এবং এই বিপিএল মৌসুমেও তিনি রান করেছেন।
তামিম বলেছিলেন যে বিসিবি তার প্রতিক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করা “অপ্রয়োজনীয়” ছিল কারণ তিনি ২০২৪ সালের জন্য কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে নিজেকে বাদ দিয়েছিলেন যাতে নিজেকে বাংলাদেশ থেকে দূরে রাখা যায়।
তামিম ইকবালের এই অবসর ঘোষণা বাংলাদেশের ক্রিকেটে একটি যুগের সমাপ্তি নির্দেশ করে। তার অসাধারণ ক্যারিয়ার এবং অবদানের জন্য তিনি সবসময় স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।