আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এককভাবে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে জাতীয় পার্টির জি এম কাদের নেতৃত্বাধীন অংশ। দলীয় সূত্র বলছে, এবার জাপা পুরো ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। শুধু তাই নয়—রংপুর বিভাগের ৩৩টি আসনে ইতোমধ্যে সম্ভাব্য প্রার্থী বাছাই ও চূড়ান্ত তালিকা তৈরির নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। রাজনৈতিক অঙ্গনে ‘জাপা চমক’ নিয়েও জোর গুঞ্জন চলছে।
রবিবার (৩০ নভেম্বর) রাতে জি এম কাদেরের অংশের এক কো-চেয়ারম্যান ও তিনজন প্রেসিডিয়াম সদস্য নিশ্চিত করেন, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, ভোটে অংশগ্রহণ ও সাংগঠনিক বিস্তার নিয়ে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে টানা বৈঠক চলছে। রংপুরের শীর্ষ নেতাদের ঢাকায় ডেকে এনে নির্বাচনী প্রস্তুতি জোরদার করতে বলা হয়েছে।
দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও রংপুর জেলার আহ্বায়ক আজমল হোসেন জানান, জাপা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেবে এবং রংপুর-৩ আসনে নির্বাচন করবেন জি এম কাদের। গাইবান্ধা–১ আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন মহাসচিব শামীম হায়দার পাটোয়ারী। তিনি বলেন, “রংপুরে ২২টি আসন একসময় জাপার ছিল, এবার তার বড় অংশ পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে আমরা মাঠে নামছি।”
নেতারা জানান, রংপুর বিভাগের ছয়টি আসনে দুটোতে নতুন মুখ প্রার্থী হতে যাচ্ছেন। এর মধ্যে রংপুর-১ আসনে জনপ্রিয় এক ব্যারিস্টারকে সবুজ সংকেত দেওয়া হয়েছে। গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর ও সিলেটেও ‘গ্রহণযোগ্য ও শক্তিশালী’ প্রার্থী রাখা হবে। কয়েকটি আসনে প্রার্থী চূড়ান্তও হয়েছে।
জাপার রংপুর মহানগর সাধারণ সম্পাদক এস এম ইয়াসির বলেন, “লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এখনো পুরোপুরি তৈরি হয়নি। নির্বাচনি প্রচারণার স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে কমিশনকে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। তবে জাতীয় পার্টির নির্বাচনে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধা বা নিষেধাজ্ঞা নেই।”
অপরদিকে তফসিল ঘোষণার আগেই ‘চমক’ দেখানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন দলের এক প্রেসিডিয়াম সদস্য। তাঁর ভাষায়, “সাবেক সরকারি কর্মকর্তাসহ কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি জাতীয় পার্টিতে যোগ দিচ্ছেন। তারা নির্বাচনে জাপার হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।”
এদিকে একাংশের জাপা চেয়ার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জুর নেতৃত্বে নতুন রাজনৈতিক জোট গঠনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। জোটের সম্ভাব্য নাম ‘জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোট’ এবং মুখপাত্র থাকছেন এ বি এম রুহুল আমিন হাওলাদার। গুলশানে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এই সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়।
সব মিলিয়ে, জাতীয় নির্বাচন ঘনিয়ে আসতেই জাতীয় পার্টির ভেতরে দ্রুতগতির রাজনৈতিক সমীকরণ, জোট-সংকেত ও প্রার্থী চূড়ান্তকরণ দেশের রাজনীতিতে নতুন আলোচনার জন্ম দিয়েছে।