জনি আহমেদ-(চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি):
আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, বিএনপি যে নতুন রুপে সম্মেলন করতে যাচ্ছে এটাও জেলাবাসীর কাছে চমক। বিগত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলটাই ছিলো তাদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। কে পারে আওয়ামী লীগের সাথে। তাদের জোর শক্তির ঐক্যতায় বিএনপির সাধ্য হয়নি মেইন সড়ক বা শহরের মঞ্চস্থে আলোচনা করা।
সবসময় মানুষের কাছে মনে হয়েছে আওয়ামী লীগ একাই গণতান্ত্রিক দল। আর কোনো দল এ দেশে আছে। সেটা মনে করারও সুযোগ দেয়নি মানুষকে। কিন্তু হঠাৎ করেই শিলাবৃষ্টির মতো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়েছে আওয়ামী লীগ। জুলাই-আগস্টের বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনকে ঘিরে গণহত্যার দায়ে ভারতে পালিয়ে যেতে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর পর থেকেই সবকিছু যেনো খোলসা হয়ে গেলো।
বিএনপি জামায়াতসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো সত্যিই যেনো প্রাণ ফিরে পেলো। আর সেই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে সবাই সবার মতো গুছিয়ে উঠতে শুরু করেছে রাজনৈতিক দলগুলো। ঠিক একইভাবে বিএনপিও যেনো জেল থেকে ছাড়া পেয়েই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে দলটি। বিভিন্ন কর্মকা-ের অংশহিসেবে হাসি আনন্দ ফুরফুরে মেজাজেই ঠিক ১৪ বছর পর স্বাধীনভাবে বিশাল এক আয়োজনের মধ্যদিয়ে সম্মেলনটি শেষ করবে জেলা বিএনপি। তবে এবার নির্ধারিত ৮০৮ কাউন্সিলদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে নির্বাচিত হবে নেতা।
এ সম্মেলনকে ঘিরে চুয়াডাঙ্গায় কয়েকদিন ধরেই মোটরসাইকেল শোডাউন মিটিং মিছিলে সরব রয়েছে বিএনপিসহ বিভিন্ন সংগঠন। বিভিন্ন ব্যানার ফেস্টুনে সেজেছে পুরো শহর। দীর্ঘ ১৪ বছর বিশেষ উপেক্ষিত পার করে আগামীকাল শনিবার (২৩ নভেম্বর) চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে।
এ কারণে গোটা জেলাকে নতুন সাজে সজ্জিত করা হয়েছে। উৎসবের আমেজ ছড়িয়ে পড়েছে দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যেও। তোরণ, পোস্টার, ফেস্টুনে ছেয়ে গেছে শহরের রাজপথ। আর এতে শোভা পাচ্ছে, কেন্দ্রীয় ও জেলার শীর্ষ নেতাদের ছবি। সম্মেলনস্থল শহরের টাউন ফুটবল মাঠ সেজেছে বর্ণিল সাজে। মাঠের পশ্চিম প্রান্তে বিশাল আকৃতির মঞ্চ তৈরি করা হয়েছে।
সম্মেলনে ১৩ হাজার নেতাকর্মীর সমাবেশ ঘটবে এমন প্রত্যাশাই করছেন জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতারা।
গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সম্মেলনস্থল পরিদর্শন করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু ও সদস্য সচিব শরীফুজ্জামান। সম্মেলন উপলক্ষে প্রায় শেষ হওয়া সকল প্রস্তুতি ঘুরে ঘুরে দেখেন তারা। পরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপ করেন বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত সভাপতি ও বর্তমান আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু। সেসময় তিনি বলেন, এবার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ভোটের মাধ্যমে সম্মেলন হচ্ছে।
বিএনপি তার নিজ ঘর থেকেই গণতন্ত্র চর্চা করতে বদ্ধপরিকর। ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকারের সময় এই দলতে নানা নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করতে হয়েছে। এখন স্বাধীনভাবে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনার সময় এসেছে। নিজেদেরকে নতুন করে যাচাই করারও সময় হয়েছে।
ভোট প্রসঙ্গে বাবু খান বলেন, সম্মেলন উপলক্ষে যেসব প্রার্থী অংশ নিয়েছেন তারা সকলেই যোগ্য। আবার যারা কাউন্সিলর আছেন তারা সবাই বিচক্ষণ এবং মেধা সম্পন্ন। যার ভোট সে নিজেই দিবে, যাকে খুশি তাকেই দিবে। এখানে সবাই স্বাধীন। নিরপেক্ষভাবে ভোটাররা ভোটের মাধ্যমে তাদের নেতা নির্বাচন করবেন।
সম্মেলনের নিরাপত্তার ব্যাপারে মাহমুদ হাসান খান বাবু বলেন, সম্মেলন শান্তিপূর্ণ করতে দলের ১১শ’ স্বেচ্ছাসেবী দায়িত্ব পালন করবেন। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও বিভিন্ন সংস্থার সদস্যরা থাকবেন সজাগ অবস্থানে। সম্মেলন শান্তিপূর্ণ করা একটা বড় চ্যালেঞ্জ। সম্মেলন উৎসবমূখর করতে আমাদের সকল প্রস্তুতি প্রায় শেষ।
এবার জেলা বিএনপির সভপাতি প্রার্থী হিসেবে বর্তমান আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু একক প্রার্থী থাকায় তিনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন হতে চলেছেন। ফলে এ পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে না। তবে সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে হবে ভোটের লড়াই। এ দুটি পদে প্রার্থী রয়েছেন ৬ জন।
এর মধ্যে সাধারণ সম্পাদক পদে লড়বেন জেলা বিএনপির বর্তমান সদস্য সচিব শরীফুজ্জামান শরীফ ও মিলিমা বিশ^াস মিলি। আর সাংগঠনিক সম্পাদক পদে লড়বেন সফিকুল ইসলাম পিটু, মির্জা ফরিদুল ইসলাম শিপলু, খালিদ মাহমুদ মিল্টন ও মোমিনুর রহমান।
এবারের সম্মেলনে আরও একটি চমক হচ্ছে দলের শীর্ষ নেতাদের উপস্থিতি। সম্মেলনের প্রধান অতিথি হিসেবে ভার্চ্যুয়ালি যুক্ত থাকবেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
সশরীরে উপস্থিত থেকে সম্মেলনের উদ্বোধন করেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বিশেষ অতিথি থাকবেন ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, খুলনা বিভাগের ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক বাবু জয়ন্ত কুমার কুন্ডু।
এছাড়া বক্তব্য রাখবেন বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্যরা এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দ। সম্মেলনের সভাপতিত্ব করবেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক মাহমুদ হাসান খান বাবু ও সঞ্চালনা করবেন সদস্য সচিব শরীফুজ্জামান শরীফ।
উল্লেখ্য, সর্বশেষ ২০১০ সালে বঙ্গজ ফ্যাক্টরির মধ্যে চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
এরপর ২০২১ সালে চুয়াডাঙ্গা জেলা আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। তবে কেন্দ্রীয় কর্মসূচি বাস্তবায়ন, আন্দোলন সংগ্রাম, মামলা, হামলা, গ্রেপ্তারের কারণে নির্ধারিত সময়ে সম্মেলন করতে পারেনি জেলা বিএনপি।
খানিকটা দেরিতে হলেও এবার জেলা বিএনপি বড় আয়োজনে সম্মেলন করতে যাচ্ছে। চুয়াডাঙ্গা জেলা বিএনপির ইতিহাসে কোনো খোলা ময়দানে এতবড় আয়োজনে সম্মেলন এই প্রথম। এ সম্মেলন উপলক্ষে গত ১৪ নভেম্বর সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করা হয়।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, সাময়িক মজুতদারির কারণে চালের বাজার অস্থিতিশীল। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?