জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি ড. আলী রিয়াজের পদত্যাগ দাবি করেছে বিএনপির নিউইয়র্ক স্টেট শাখা। স্থানীয় সময় শনিবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের নবান্ন পার্টি হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে এই দাবি জানান বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য গিয়াস আহমেদ।
লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করা হয়, ড. আলী রিয়াজ অতীতে কার্যক্রম নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিভিন্ন প্যানেল আলোচনায় দলটির পক্ষ সমর্থন করেছেন।
গিয়াস আহমেদ বলেন,
“ফ্যাসিবাদী আমলে দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে ‘৭১-এর চেতনা’, গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার, মানবাধিকার, সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও জনগণের ভোটাধিকারের বাস্তবায়নের জন্য বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে সংগ্রাম চালিয়ে এসেছে। লাখো মিথ্যা মামলা, জেল-জুলুম, ‘আয়না ঘর’ ও ‘ক্রসফায়ার’-এর মুখেও তারা মাথানত করেনি।”
তিনি বলেন,
“৫ আগস্ট শেখ হাসিনা দেশত্যাগের আগের সপ্তাহে পাঁচজন ছাত্র সমন্বয়ক ডিবি হারুনের হোটেলে ভাত খেয়ে আদালতের নির্দেশে কোটা সংস্কার মেনে নিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহার করেছিলেন। কিন্তু তারেক রহমান প্রবাসী নেতৃবৃন্দ ও দেশের নেতাকর্মীদের ঐক্যবদ্ধভাবে এক দফা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ার আহ্বান জানান। এরপর ছাত্রজনতা, শ্রমজীবী মানুষ, রিকশাচালক, গার্মেন্ট শ্রমিক ও দেশপ্রেমিক সাংবাদিকসহ সর্বস্তরের মানুষ আন্দোলনে যোগ দেয়, যার ফলে খুনি হাসিনা দেশত্যাগে বাধ্য হন।”
বিএনপি নেতা অভিযোগ করেন,
“জামায়াতের সহযোগিতায় অন্তর্বর্তী সরকার এখন গণতন্ত্রকে ভূলুণ্ঠিত করতে চক্রান্ত করছে। ঐকমত্য কমিশন প্রায় এক বছর ধরে রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করেছিল। কিন্তু এখন তারা হঠাৎ করে সংবিধান পরিবর্তনের নামে গণভোটের উদ্যোগ নিচ্ছে, যেখানে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম বাদ দেওয়া হয়েছে। এটি দেশের জনগণ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা।”
তিনি বলেন,
“সংবিধান সংশোধন সাধারণত সংসদে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে হয়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের গোপন পদক্ষেপ নির্বাচন প্রক্রিয়া বানচালের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই সরকার জামায়াতের সহায়তায় ভোটবিহীনভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার চেষ্টা করছে। দুর্নীতি, তদবির-বাণিজ্য, প্রশাসনিক ব্যর্থতা, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও গার্মেন্ট শিল্পের সংকটে দেশকে পিছিয়ে দিচ্ছে। আওয়ামী লীগের পতিত দোসররা এখনও প্রশাসনে দিল্লির ইশারায় কাজ করছে।”
গিয়াস আহমেদ আরও বলেন,
“ড. আলী রিয়াজ অতীতে আওয়ামী লীগের পক্ষে কাজ করেছেন। আমি নিজেও একাধিক প্যানেল আলোচনায় তার সঙ্গে অংশ নিয়েছি, যেখানে তিনি প্রকাশ্যে আওয়ামী লীগের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। এখন তিনি ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি হয়ে রাজনৈতিক বিভেদ সৃষ্টি করছেন। আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি।”
বিএনপির অবস্থান তুলে ধরে তিনি বলেন,
“গণভোট নির্বাচনের দিনই অনুষ্ঠিত হবে—এটাই বিএনপির অবস্থান। যে বিষয়গুলোতে রাজনৈতিক দলগুলো একমত হয়নি, সেগুলো নির্বাচনী ইশতেহারে উল্লেখ করতে হবে। ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হলে তার আগে গণভোট আয়োজন করতে হাজার কোটি টাকার ব্যয় হবে, যা একদিনেই সম্পন্ন করা সম্ভব।”
জামায়াতের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন,
“জামায়াত সবসময় জনগণের বিপক্ষে কাজ করেছে। ১৯৪৭ সালে মুসলমানদের স্বার্থবিরোধী অবস্থান নিয়েছে, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে থেকে গণহত্যা চালিয়েছে, ১৯৮৬ সালে স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে আঁতাত করেছে এবং বারবার জাতিকে বিপথে নিয়েছে। আজও তারা জনগণের ভোটাধিকার হরণে সক্রিয়।”
তারেক রহমানের বিষয়ে তিনি বলেন,
“অন্তর্বর্তী সরকার তার দেশে ফেরা ঠেকাতে ষড়যন্ত্র করছে। অতীতে আওয়ামী লীগ সরকার তাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। এখনো পর্যন্ত তার নিরাপত্তা নিয়ে কোনো নিশ্চয়তা দেয়নি সরকার। বরং গোয়েন্দা সংস্থাগুলো তাকে নিরুৎসাহিত করছে।”
তিনি দাবি করেন,
“বর্তমান আদালত ইতোমধ্যে প্রমাণ করেছে, হাসিনা সরকারের দেওয়া মামলাগুলো মিথ্যা ও রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমরা সরকারের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পূর্ণ নিরাপত্তা নিশ্চিত করুন।”
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন নিউইয়র্ক স্টেট বিএনপির সভাপতি অলিউল্লাহ আতিকুর রহমান এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক সাইদুর রহমান সাঈদ। উপস্থিত ছিলেন সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট জসিমউদ্দিনসহ অন্যান্য নেতাকর্মীরা।