বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক ও বিএনপির ক্রীড়া-বিষয়ক নেতা আমিনুল হক এক বক্তব্যে জাতীয় ক্রিকেট দলের বর্তমান খেলোয়াড় ও সংসদ সদস্য সাকিব আল হাসানকে নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন। তার বক্তব্য রাজনৈতিক অঙ্গনে মিশ্র প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে।
সম্প্রতি এক রাজনৈতিক সভায় দেওয়া বক্তব্যে আমিনুল হক বলেন, “সাকিব গত ১৭ বছরের স্বৈরাচার সরকারের একজন এমপি হিসেবে জাতির সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। নিজের সুবিধার জন্য তিনি অবৈধ সংসদে যোগ দিয়েছেন।” তার মতে, একজন খেলোয়াড়ের দায়িত্ব হলো দেশের জন্য খেলোয়াড়সুলভ মানসিকতা বজায় রাখা, কিন্তু সাকিব তার ব্যক্তিগত স্বার্থে রাজনৈতিকভাবে আপস করেছেন।
তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের একজন খেলোয়াড়কে দেশে আসতে দেওয়া হবে কি না, সেটা রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত। তবে আমার প্রশ্ন হচ্ছে—স্বৈরাচার সরকারের সঙ্গে থাকা ব্যক্তিদের অবশ্যই বাংলাদেশের মাটিতে বিচার হবে, ইনশাআল্লাহ।”
সাকিব আল হাসান গত জাতীয় নির্বাচনে মাগুরা-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। তিনি বিশ্বখ্যাত অলরাউন্ডার হিসেবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে সফল খেলোয়াড়দের একজন এবং আইসিসির অলরাউন্ডার র্যাঙ্কিংয়ে বহুবার শীর্ষস্থান অর্জন করেছেন।
তবে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার আগে এবং পর থেকেই তার রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা নিয়ে দেশের ক্রীড়া ও রাজনৈতিক অঙ্গনে বিতর্ক চলমান রয়েছে। বিশেষ করে, সাকিবের মতো একজন আন্তর্জাতিক তারকার রাজনীতিতে সরাসরি অংশগ্রহণের ফলে ক্রীড়া ও রাজনীতির সীমারেখা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
অন্যদিকে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বর্তমান সরকার একটি স্বৈরতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা চালু করেছে এবং সেই কাঠামোর অংশ হিসেবে যারা কাজ করছেন, তারা জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করছেন। আমিনুল হকের বক্তব্য সেই অবস্থান থেকেই এসেছে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছে।
সাকিব আল হাসানের ঘনিষ্ঠ মহল থেকে এখনও এই বক্তব্যের কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি। তবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের অনেকেই সামাজিক মাধ্যমে এই বক্তব্যের নিন্দা জানিয়েছেন এবং একজন জাতীয় গৌরবের খেলোয়াড়কে এভাবে হেয় করার চেষ্টা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের বাইরে বলে অভিহিত করেছেন।
বিশ্লেষকরা বলছেন, একজন জনপ্রিয় ক্রীড়াবিদের রাজনৈতিক অংশগ্রহণ সবসময়ই আলোচনার জন্ম দেয়, তবে সেটি যখন বিদ্বেষমূলক আক্রমণের পর্যায়ে চলে যায়, তখন তা সামাজিক মেরুকরণ ও বিভক্তি বাড়াতে পারে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ বক্তব্য ইতিমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। কেউ কেউ আমিনুল হকের বক্তব্যকে ‘হীন রাজনৈতিক কৌশল’ বলে আখ্যা দিয়েছেন, আবার কেউ কেউ সাকিবের রাজনৈতিক ভূমিকা নিয়ে খোলামেলা বিতর্কের প্রয়োজনীয়তা উল্লেখ করেছেন।
উল্লেখ্য, আমিনুল হক ১৯৯৫ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত জাতীয় ফুটবল দলে খেলেছেন এবং দেশের অন্যতম সেরা গোলরক্ষক হিসেবে স্বীকৃত। বর্তমানে তিনি বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এই বক্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বাড়বে কি না, তা সময়ই বলে দেবে। তবে ক্রীড়া ও রাজনীতির দ্বৈত ভূমিকা নিয়ে বাংলাদেশে বিতর্ক আরও গভীর হচ্ছে।

জয় ও নিঝুম মজুমদারের এই আহ্বানকে দেশবিরোধী বলে মনে করেন ?