বিতর্ক ও আলোচনা-সমালোচনার মধ্য দিয়ে ঢাবি চারুকলা অনুষদের আয়োজিত বাংলা নববর্ষের ঐতিহ্যবাহী শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। ‘মঙ্গল শোভাযাত্রা’ নামটি এ বছর আর থাকছে না। নতুন নাম দেওয়া হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’।
এবারের আয়োজনটি বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ জুলাই বিপ্লবের পর এটিই হবে প্রথম পহেলা বৈশাখ উদযাপন। সে অনুযায়ী শোভাযাত্রার মোটিফ বা প্রতীক তৈরিতে এসেছে বড় পরিবর্তন ও রাজনৈতিক বার্তা।
শোভাযাত্রায় এবার বড়, মাঝারি ও ছোট আকারে নানা প্রতীক ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে থাকবে ৬টি বড় মোটিফ। অন্যতম আলোচিত বড় মোটিফটি হলো ‘ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি’, যা শোভাযাত্রার শুরুতেই রাখা হবে। নারীর দাঁতাল মুখ, মাথায় খাড়া শিং—এই মুখাকৃতিটি রাজনৈতিকভাবে স্পষ্ট বার্তা বহন করছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে একে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতিকৃতি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এই বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমদ খান বলেন, “ফ্যাসিস্টের প্রতিকৃতি দেখে কেউ যদি কারো সঙ্গে মিল খুঁজে পান, তা প্রত্যেকের ব্যক্তিগত ব্যাপার। আমরা সামগ্রিকভাবে ফ্যাসিবাদের বিপক্ষে আমাদের অবস্থান তুলে ধরছি।”
এছাড়া বড় মোটিফে আরও থাকছে কাঠের বাঘ, ইলিশ মাছ, টাইপোগ্রাফিতে লেখা ‘৩৬ জুলাই’, শান্তির প্রতীক পায়রা, পালকি এবং জুলাই আন্দোলনে নিহত কিশোর মুগ্ধের পানির বোতল।
মুগ্ধের পানির বোতলকে কেন্দ্র করে তৈরি করা হচ্ছে ১৫ ফুট উচ্চতার একটি বিশেষ শিল্পকর্ম, যেটি লোহার রড দিয়ে নির্মিত। এর ভিতরে থাকবে একাধিক খালি বোতল—প্রতীক হিসেবে যা শহিদদের অনুপস্থিতি ও হারিয়ে যাওয়া প্রাণের বহিঃপ্রকাশ।
বড় মোটিফ ছাড়াও থাকছে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রতীক ও লোকজ উপকরণ। এর মধ্যে রয়েছে—১০টি সুলতানি ও মুঘল আমলের মুখোশ, ৮০টি ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি, ২০টি রঙিন চরকি, ২০০টি বাঘের মাথা, ৮টি তালপাতার সেপাই, ১০টি পলো, ৫টি তুহিন পাখি, ৬টি মাছের চাই, ৪টি পাখা, ২০টি মাথাল, ২০টি ঘোড়া, ৫টি লাঙল, ৫টি মাছের ডোলা এবং ১০০ ফুট দীর্ঘ লোকজ চিত্রাবলীর ক্যানভাস।
চারুকলার সামনের দেয়ালে আঁকা হচ্ছে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী শখের হাঁড়ির মোটিফ। অন্যদিকে জয়নুল শিশু নিকেতনের দেয়ালে সাঁওতালদের মাটির বাড়ির দেয়ালের অনুকরণে তৈরি করা হচ্ছে চিত্রকর্ম।
এইবারের শোভাযাত্রায় বিশেষ একটি নতুন সংযোজন হলো ফিলিস্তিনের নিপীড়িত মুসলমানদের প্রতি সংহতি প্রকাশে তরমুজের মোটিফ। এ প্রতীকটি বর্তমান বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মুসলিম বিশ্বে নিপীড়নের বিরুদ্ধে অবস্থান এবং ফিলিস্তিনের প্রতিরোধ সংগ্রামের প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ হিসেবে স্থান পাচ্ছে।
সবমিলিয়ে, এ বছরের বাংলা নববর্ষের শোভাযাত্রা শুধুমাত্র উৎসবের নয়, বরং এটি একটি রাজনৈতিক ও সামাজিক বার্তা বহনকারী প্রতীকী আয়োজন হয়ে উঠছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, বর্ষবরণ উৎসবের মধ্যে দিয়েই তাঁরা নতুন প্রজন্মের সামনে প্রতিরোধ, সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্র্য এবং ন্যায়ের পক্ষে অবস্থানের বার্তা তুলে ধরতে চান।

এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনি মনে করেন?