রাজধানীর পূর্বাচলে দশ কাঠার একটি প্লট জালিয়াতির মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার কন্যা সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ ১৮ জনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেছেন ঢাকার একটি আদালত। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় এই আদেশ দিয়েছেন আদালত।
আজ ঢাকার মহানগর জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মো. জাকির হোসেন গালিব মামলার অভিযোগপত্র গ্রহণ করে এই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। আদালত পরবর্তী পদক্ষেপ হিসেবে গ্রেফতার সংক্রান্ত তামিল প্রতিবেদন দাখিলের জন্য আগামী ৪ মে দিন ধার্য করেন।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর মীর আহম্মেদ সালাম।
গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হওয়া ১৮ আসামির মধ্যে শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুল ছাড়াও রয়েছেন: গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম সরকার, সিনিয়র সহকারী সচিব পুরবী গোলদার, অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন, সচিব মো. শহীদ উল্লা খন্দকার, রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যানের পিএ মো. আনিছুর রহমান মিঞা, রাজউকের সাবেক সদস্য মোহাম্মদ খুরশীদ আলম, কবির আল আসাদ, তন্ময় দাস, মোহাম্মদ নাসির উদ্দীন, মেজর (অব.) সামসুদ্দীন আহমদ চৌধুরী, মো. নুরুল ইসলাম, পরিচালক শেখ শাহিনুল ইসলাম, উপ-পরিচালক মো. হাফিজুর রহমান ও হাবিবুর রহমান, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব-১ মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন এবং সাবেক গৃহায়ণ ও গণপূর্ত প্রতিমন্ত্রী শরীফ আহমেদ।
এই মামলায় চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি দুদকের সহকারী পরিচালক আফনান জান্নাত কেয়া বাদী হয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্ত শেষে গত ১০ মার্চ তিনি আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন, যেখানে অভিযুক্তের তালিকায় শেখ হাসিনা ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলসহ মোট ১৮ জনের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। চার্জশিটে সাক্ষী রাখা হয়েছে ১৬ জনকে।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অসৎ উদ্দেশ্যে নিজ ও পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের মালিকানাধীন ঢাকার রাজউক নিয়ন্ত্রিত এলাকায় বাড়ি বা ফ্ল্যাট থাকার তথ্য গোপন করে পূর্বাচল নতুন শহর আবাসন প্রকল্পে দশ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ নেন। তিনি কোনো ধরনের আবেদন না করেই মায়ের কাছে ব্যক্তিগত আবেদনের ভিত্তিতে রাজউকে আবেদন জমা দেন এবং পরে সেই প্লট তার নামে বরাদ্দ ও রেজিস্ট্রিভুক্ত হয়।
এতে আরও বলা হয়, বরাদ্দ সংক্রান্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা আইন, বিধি, নীতিমালা ও প্রচলিত পদ্ধতি লঙ্ঘন করে পরস্পর যোগসাজশে একে অপরকে এবং অন্যকে অবৈধভাবে লাভবান করেছেন। সায়মা ওয়াজেদ পুতুল প্রকল্পের ২৭ নম্বর সেক্টরের ২০৩ নম্বর রাস্তার ১৭ নম্বর প্লট নিজের নামে বরাদ্দ নিয়ে বর্তমানে দখলে রেখেছেন।
মামলার এজাহারে বলা হয়, ধানমন্ডি আবাসিক এলাকায় তার পরিবারের মালিকানায় রাজউক অনুমোদিত বাড়ি বা ফ্ল্যাট থাকার পরও তিনি সেই তথ্য গোপন করে মায়ের ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্লটটি পেয়েছেন। তার এই পদক্ষেপ প্রতারণামূলক, বেআইনি অনুগ্রহ প্রদর্শনের মাধ্যমে এবং দুর্নীতির মাধ্যমে সুবিধা আদায়ের শামিল।
তদন্তকারী সংস্থা চার্জশিটে উল্লেখ করেছে, মামলার আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে দণ্ডবিধি ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের একাধিক ধারায় দণ্ডনীয় অপরাধ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, ক্ষমতার অপব্যবহার, সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ, অবৈধ প্রভাব খাটানো ও বেআইনি লাভ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মামলাটি বর্তমানে বিচারিক প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপে রয়েছে। আগামী ৪ মে আদালতে পরবর্তী শুনানির দিন নির্ধারিত হয়েছে। মামলার অগ্রগতি, গ্রেফতার কার্যক্রম এবং আসামিদের আইনি পদক্ষেপের দিকে নজর রাখছে রাজনৈতিক ও আইনজীবী মহল। বিষয়টি দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এবং প্রশাসন কাঠামোয় বড় ধরনের আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, সাময়িক মজুতদারির কারণে চালের বাজার অস্থিতিশীল। আপনিও কি তা-ই মনে করেন?