নাটোর প্রতিনিধিঃ
উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা কাটিয়ে নাটোরের নলডাঙ্গায় সক্রিয় হচ্ছে আওয়ামীলীগ। উপজেলার ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা ধীরে ধীরে বের হতে শুরু করেছেন। বড় ধরনের সভা-সমাবেশ,আলোচনা সভা ও মানববন্ধনের মতো কর্মসূচিতে না থাকলেও,বিভিন্ন এলাকায় কৌশলে চলছে মিটিং।
গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর দেশের অন্যান্য স্থানের মতো নলডাঙ্গার আওয়ামীলীগ,ছাত্রলীগসহ সহযোগী সংগঠনের নেতারা আত্মগোপনে চলে যান। এর পর থেকে তাঁদের প্রকাশ্যে বা গোপনে কোন তৎপরতা ছিল না। সম্প্রতি উপজেলায় দেয়াল লিখনের মাধ্যমে তাঁদের তৎপরতা সামনে আসে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,উপজেলা মাধনগর বাজার,মাধনগর ডিগ্রী কলেজ,শামসুল ইসলাম উচ্চ বিদ্যালয়,বাজারের প্রবেশ মুখে,বাজেহালতি ব্রীজ,আনিচ মোড়,ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়,বাঁশিলা মাদ্রাসা,বাঁশিলা হাইস্কুল,পাটুল-নলডাঙ্গা সড়ক,নাটোর-নওগাঁ আঞ্চলিক মহাসড়কের বাজেহালতি ব্রীজ,খাজুরাসহ উপজেলা এলাকার দেয়ালে দেয়ালে “জয়বাংলা”স্লোগান লেখা হয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় ভবনের দেয়ালে লাল,কালো কালিতে এসব লেখা হয়।
বিএনপি নেতা কামরুল ইসলাম,শিবির নেতা আবু রায়হান,স্বেচ্ছাসেবকদল নেতা উজ্জল রহমান,জাহিদুল ইসলাম,বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দলোন নাটোর জেলার সিনিয়র যুগ্ন আহব্বায়ক.মোঃ কাজি আসিকুর রহমান,যুবদলের এনায়েত হোসেনসহ অনেকে জানান,আওয়ামীলীগ গোপনে মাধনগর,খাজুরা,বাঁশিলায়-জয়বাংলা স্লোগান লেখা,বিভিন্ন স্থানে ৮ থেকে ১৫ জন টিম করে উপজেলার মাধনগর,বুড়িরভাগ,নলডাঙ্গা রেল স্টেশন,অধিরেরমোড়,শীতলাই,চৈউখালি,বাঁশিলা,পশ্চিম সোনাপাতিল,পাঙ্গালব্রিজ,ঠাকুরলক্ষীকুল,চাঁদপুর,মহিষডাঙ্গাসহ বিভিন্ন এলাকায় গোপন তৎপরতা এবং বিভিন্ন গ্রুপ খুলে তাদের গোপনে নাশকতার পরিক্ল্পনা ও গোপন কার্যকমে অব্যহত আছে।
তবে এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুস শুকুর বলেন,আমরা এমতিই বসে থাকি। পারিবারিকসহ সব আলোচনাই হয়। আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। রাস্তা ঘাটে আমাকে অনেকেই জিজ্ঞাস করে রাজনীতির কি খবর। তবে অনেকেই চলে আসছে।
আওয়ামীলীগের এসব কর্মকান্ডের প্রতিবাদে কয়েক দফা বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ,মানববন্ধন করেছে পৌর-উপজেলা বিএনপি ও ইউনিয়ন বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন ।
গত (১৯ জানুয়ারী) রবিবার বিকালে উপজেলা বিএনপি ও পৌর বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মির উদ্দ্যোগে নলডাঙ্গায় বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়। সোমবার(২০ জানুয়ারী) সন্ধায় মাধনগর ইউনিয়ন বিএনপি এবং অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মির উদ্দ্যোগে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করা হয়।
একই সময় উপজেলার বাঁশিলা বাজারে বিক্ষোভ-সমাবেশ করা হয় বৃহস্পতিবার(২৩ জানুয়ারী) মানববন্ধন করেছে উপজেলা ও পৌর সমবায় দল। এসময় তাদের গ্রেফতার দাবিতে প্রসাশনকে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটার দেয় নেতারা।এছারা আওয়ামীলীগের গোপন মিটিং এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সৃষ্টির অভিযোগে গত ২৮ ফ্রেবুয়ারি রাতে নলডাঙ্গায় বিক্ষোভ সমাবেশ করে,নলডাঙ্গা উপজেলা ও পৌর স্বেচ্ছাসেবক দল। রবিবার(১৬ মার্চ) রাত সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবকদলের নেতাকর্মির উদ্দ্যোগে এ বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন।
এসব কর্মসূচিতে বিএনপি নেতারা বলেন,গত কয়েকদিন থেকে আওয়ামী লীগ ও নিষিদ্ধ সংগঠনগুলো উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় গোপন মিটিং ও দেয়াল লিখন করেছে। যার কারণে আমরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছি। আমরা প্রশাসনকে বারবার বলছি আপনারা সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার করুন,কিন্তু আজ পর্যন্ত কুখ্যাত সন্ত্রাসী একজন ও গ্রেপ্তার হয় নাই। যার কারণে আমরা বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করছি,এরপরে বড় কর্মসূচি দিতে বাধ্য করবেন না,যত দ্রুত পারেন আপনারা নিষিদ্ধের সংগঠন ছাত্রলীগ,যুবলীগ গ্রেপ্তার করুন,সর্বহারা নিষিদ্ধ সংগঠনের সদস্যদের গ্রেফতার করুন।
৫ই আগস্টের পর থেকে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাবার পর নিষিদ্ধ ঘোষিত দল বিভিন্ন চক্রান্ত ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। আমরা প্রশাসনকে বলতে চাই আমরা আইন হাতে তুলে নিতে চাই না,যদি আমাদের আইন হাতে তুলে নিতে হয় বাংলার মাটিতে কোন আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব থাকবে না।
ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে এরপরে বাংলার মাটি থেকে যুবলীগ ও আওয়ামীলীগকে বাংলাদেশ থেকে বিলীন করে দেওয়া হবে। সমাবেশে বক্তরা আরও বলেন,বিগত দিনে আমরা ৫জন লোক,এক জায়গায় হতে পারি নাই। আওয়ামীলীগের লোকজন,অনেক সর্বহারা লোক এখানে ঘোরাফেরা করছে। তাদেরকে যদি গ্রেফতার করা না হয়,আগামী দিনে আমরা বৃহত্তর কর্মসূচি ঘোষণা করবো ম।নিষিদ্ধ সর্বহারা,ছাত্রলীগ যুবলীগ,আওয়ামীলীগের সন্ত্রাসীদের গ্রেফতার দাবি ও ৫ জন একত্রিত হলেই প্রতিহত করতে নেতা-কর্মীদের নির্দেশও প্রদান করা হয়।
নলডাঙ্গা থানার তদন্ত ওসি মনোয়ার জাহান জানান,আমাদের নজরদারি অব্যহত আছে,কিছু পরিলক্ষিত হলে,অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এ বিষয়ে নলডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন,বিষয়গুলো নজরদারিতে রয়েছে। খবর পেলে আমরা তাৎক্ষনিক ব্যবস্থা গ্রহন করবো।

‘ছাত্র-জনতা হত্যার সম্পূর্ণ বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তিকে রাজনীতি করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত’ আপনি কি সমর্থন করেন?