জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, শেখ হাসিনার মতো একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠীকে নির্বাচনের বাইরে রেখে কোনো নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এমন পরিস্থিতিতে দেশ সংঘাত ও দুর্যোগপূর্ণ অবস্থায় পড়বে। তাই আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের পক্ষের নয় জাতীয় পার্টি।
শুক্রবার (২১ মার্চ) সন্ধ্যায় রংপুরের পল্লী নিবাসে জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের কবর জিয়ারত শেষে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।
জিএম কাদের অভিযোগ করেন, সরকারের মদদপুষ্ট গোষ্ঠী নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নির্বাচনের সময় বিলম্ব ঘটাচ্ছে। তিনি বলেন, নির্বাচন বিলম্বিত হলে তারা শক্তিশালী হয়ে থাকবে, কিন্তু ততদিনে দেশ থাকবে কিনা, দেশের মানুষ টিকে থাকবে কিনা সেটাই বড় প্রশ্ন। সরকার পরিচালনার অভিজ্ঞতা নেই এবং রাজনীতি সম্পর্কে তাদের পরিপক্কতা নেই বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের শাসনামলে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী হলেও তাদের অপব্যবহার হয়েছে। এখনও দুর্নীতি দমন কমিশন ও বিচার বিভাগকে যথাযথভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে না। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতটাই অবনতির দিকে যে, দেশের স্থিতিশীলতা হুমকির মুখে পড়েছে। জিএম কাদের বলেন, পুলিশ বিভাগ প্রায় ভেঙে পড়েছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির কোনো সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না।
তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতিতে বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে বেকার সমস্যা আরও প্রকট হবে এবং দরিদ্রতা চরমে পৌঁছাবে। পুলিশ বাহিনীকে অকার্যকর করে দেওয়া হয়েছে এবং পুরো বাহিনীকে দোষারোপ করা হয়েছে। তিনি মন্তব্য করেন, “সব সরকারের আমলে পুলিশ সরকারী নির্দেশেই কাজ করে। যদি তারা অন্যায় করে থাকে তবে তাদের শাস্তি দেওয়া যেত। কিন্তু সরকার প্রথম ধাক্কাতেই পুলিশকে ভেঙে ফেলেছে।”
জিএম কাদের আরও বলেন, “আমেরিকার গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা বলছে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য বড় সতর্ক সংকেত। যদি আমরা এই অভিযোগকে ভুল প্রমাণ করতে না পারি, তাহলে আমাদের বাণিজ্য, রেমিট্যান্স বন্ধ হয়ে যেতে পারে। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার সংকট দেখা দিলে আমদানির অভাবে জনগণ দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হবে।”
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দেশের ৯৯ ভাগ মানুষ আন্দোলন করেছে। কিছুদিন আগে ছাত্রনেতারা বলছিলেন, তারা আন্দোলনের মাধ্যমে সরকার পতন করেছে। তারা এখন ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখছে এবং হিযবুত তাহরীরও প্রকাশ্যে তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে। দেশে মৌলবাদের উত্থান হচ্ছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, “সরকার যদি দেশ পরিচালনা করতে না পারে তাহলে অন্য কাউকে ক্ষমতা দেওয়া উচিত। নতুবা দেশের জনগণ চরম ক্ষতির সম্মুখীন হবে।”
জিএম কাদের বলেন, “আমি অনেক আগে বলেছিলাম যে, দেশ শ্রীলঙ্কার মতো পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে। তখন সাধারণ মানুষ এবং আওয়ামী লীগ আমাদের সমালোচনা করেছিল। কিন্তু এখন তারা সেই কথার সত্যতা উপলব্ধি করছে। আমি আরও বলেছিলাম যে, আওয়ামী লীগ টিকতে পারবে না, দল হিসেবে তারা একেবারে শেষ হয়ে যাবে। এখন আওয়ামী লীগ শুধু নামেই আছে।”
তিনি অভিযোগ করেন, সরকারের পক্ষ থেকে তাকে বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে ব্ল্যাকমেইল করার চেষ্টা চলছে। সরকার তাকে এবং তার দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে মুখ বন্ধ করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান আরও বলেন, “আমাদের জনসংখ্যা অনেক বেশি কিন্তু সম্পদ সীমিত। ভুল পদক্ষেপের কারণে যেকোনো সময় দেশ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। পুলিশ বাহিনীর পর এখন সেনাবাহিনীকে দুর্বল করার চেষ্টা করা হচ্ছে। সেনাপ্রধান যদি কোনো অন্যায় করে থাকেন তবে তার বিচার হবে, কিন্তু গায়ের জোরে তাকে অপসারণ করার চেষ্টা করা সঠিক নয়।”
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির ভাইস চেয়ারম্যান এসএম ইয়াসির আহমেদ, মহানগর জাতীয় পার্টির সিনিয়র সহ-সভাপতি লোকমান হোসেন, যুবসংহতি নেতা নাজিম উদ্দিনসহ অন্যান্য নেতারা।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এ বছরের শেষ দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ বছরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনিও মনে করেন?