বিএনপি নেতা রবিউল আলম সম্প্রতি একটি বেসরকারি টিভি চ্যানেলের টক শোতে অংশ নিয়ে বিএনপির রাজনৈতিক সংগ্রাম, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং দলের ভবিষ্যৎ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছেন।
তিনি বলেন, “১৭ বছর ধরে আমরা আন্দোলন করেছি, ৩৪টি ঈদ আমরা রাজপথে বা কারাগারে কাটিয়েছি। আমরা ছাত্রলীগ বা জামাতের সাথে যুক্ত ছিলাম না, বরং বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতা হিসেবে রাজপথে সংগ্রাম করেছি।
বিএনপি কখনো আপোষ করেনি বা রণে ভঙ্গ দেয়নি। আমরা ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছি, শেখ হাসিনার মতো ফ্যাসিস্ট শাসনের অবসান চেয়েছি।”
তিনি আরও যোগ করেন, “গণঅভ্যুত্থানই হলো রাজনৈতিক পরিবর্তনের সঠিক পথ। জুলাই মাসে সব শ্রেণী-পেশার মানুষ আমাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে। এক দফা দাবি ছিল—হাসিনাকে যেতে হবে।
শিক্ষার্থীরা এই আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে, কিন্তু এই শিক্ষার্থীরা সেই দিনই পাওয়া যায়নি, যেদিন মানুষ ভোটাধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। আমরা প্রতিবাদ করেছি, কারণ আমরা একটি বড় রাজনৈতিক দল এবং এটাই আমাদের দায়িত্ব ছিল। আমরা জাতির জন্য করুণা করিনি, দায়িত্ব পালন করেছি মাত্র।”
রবিউল আলম বাংলাদেশের রাজনীতিতে দুর্বৃত্তায়ন ও অর্থের প্রভাব নিয়ে বলেন, “৫৩ বছর ধরে বাংলাদেশের রাজনীতি শুধু আন্দোলন, প্রতিবাদ ও প্রতিরোধের মধ্যে সীমাবদ্ধ। এর ফলে রাজনীতিতে দুর্বৃত্তদের সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমরা সুষ্ঠু রাজনৈতিক চর্চা করতে পারিনি।
১৯৯১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত আমরা একটি গণতান্ত্রিক ট্র্যাকে ছিলাম, কিন্তু আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ১৭ বছর অনির্বাচিতভাবে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছে, যা বাংলাদেশের রাজনীতিকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলেছে।”
তিনি মিডিয়ার ভূমিকা নিয়ে সমালোচনা করে বলেন, “বিএনপি বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ ও জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল, কিন্তু কিছু মিডিয়া বিএনপির বিরুদ্ধে মিডিয়া ট্রায়াল চালাচ্ছে। যেমন, বিএনপি নেতার ড্রাইভার কোনো অপরাধ করলে তা বিএনপি নেতার সাথে জড়িত বলে চালানো হচ্ছে।
এটা সম্পূর্ণ অন্যায়। ড্রাইভার যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন, তবে তিনি ব্যক্তিগতভাবে দায়ী, দল বা নেতার সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। এভাবে দল ও নেতাকে ট্যাগ করা উচিত নয়।”
রবিউল আলম বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর নিপীড়নের কথাও উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, “১৭ বছর ধরে বিএনপি নেতাকর্মীরা এলাকা ছাড়া হয়েছে, তাদের সম্পদ দখল করা হয়েছে। তারা উদ্বাস্তুর মতো জীবনযাপন করছে।
যখন তারা তাদের ন্যায্য অধিকার ফিরে পেতে চেষ্টা করে, তখন তাদের বিরুদ্ধে দখলদারিত্বের অভিযোগ তোলা হয়। এটা বিএনপির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ।”
তিনি আরও বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বন্দ্ব ও সংঘাত থাকবেই, কিন্তু কোনো দলই অপরাধকে সমর্থন করে না। অপরাধ দমন ও নিয়ন্ত্রণ করা রাষ্ট্রের দায়িত্ব। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত অপরাধকে প্রশ্রয় না দেওয়া।”
শেষে তিনি নতুন রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও জনসমর্থন নিয়ে বলেন, “নতুন রাজনৈতিক প্রক্রিয়া ও আঙ্গিক প্রয়োজন। গতানুগতিক ধারায় রাজনীতি করলে জনগণের কাছে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। যারা অর্থায়ন করেন, তাদের উচিত প্রকাশ্যে দলকে সমর্থন করা।
জাতীয় নাগরিক পার্টির মতো নতুন দলগুলো যদি জনগণের সমর্থন পায়, তবে তারা নির্বাচিত হবে এবং নতুন কিছু করতে সক্ষম হবে।”

এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনি মনে করেন?