জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) আনুষ্ঠানিকভাবে আজ আত্মপ্রকাশ করতে যাচ্ছে। শুক্রবার ২৮ ফেব্রুয়ারি বিকেল ৩টায় রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে এই বহুল প্রতীক্ষিত রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেওয়া হবে। একই সঙ্গে দলীয় লোগো, মনোগ্রাম ও পতাকাও প্রকাশ করা হবে বলে জানা গেছে।
এই অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থানে আহত এবং নিহতদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত থাকবেন। পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতারা, গণতন্ত্রপন্থী ব্যক্তিত্ব এবং বিদেশি কূটনীতিকদেরও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বিশাল জনসমাগম নিশ্চিত করতে গতকাল দলটির উদ্যোক্তারা ঢাকার বাইরের নেতাকর্মীদেরও উপস্থিত থাকতে নির্দেশনা দেন।
উত্তরাঞ্চলের অন্যতম সংগঠক সারজিস আলম এ প্রসঙ্গে বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে সারা বাংলাদেশ থেকে ব্যানার উড়বে। এই নামেই মুখরিত হবে দেশ। তার বক্তব্য থেকে স্পষ্ট, এনসিপি শুধুমাত্র একটি নতুন রাজনৈতিক দল নয়, বরং এটি গণঅভ্যুত্থানের চেতনার প্রতিফলন।
নতুন এই দলের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ উপদেষ্টাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতীয় নাগরিক পার্টির নেতারা সরাসরি যমুনায় গিয়ে সরকারপ্রধানের হাতে আমন্ত্রণপত্র তুলে দেন। তবে বিতর্ক এড়াতে বর্তমান সরকারের কোনো উপদেষ্টা এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন না। এমনকি সাবেক তথ্য উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম, ছাত্র উপদেষ্টা মাহফুজ আলম এবং আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়াও আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে থাকবেন না বলে জানা গেছে।
জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ নিয়ে রাজনৈতিক মহলে তুমুল আলোচনা চলছে। বিশেষত, বিএনপি ও জামায়াতসহ ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের শরিক ৩৬টি রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, যা দলটির সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অবস্থান বোঝায়। ইতিমধ্যেই বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদসহ বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বকে আমন্ত্রণপত্র পাঠানো হয়েছে।
এছাড়া, ঢাকায় নিযুক্ত ৫১টি দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও কূটনীতিকদের এই ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। তবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ, তাদের ১৪ দলীয় জোটের শরিকরা এবং জাতীয় পার্টি পুরোপুরি আমন্ত্রণ তালিকা থেকে বাদ পড়েছে। এটি ইঙ্গিত দেয় যে এনসিপি তাদের রাজনৈতিক অবস্থান সুস্পষ্ট করতে চাইছে এবং আওয়ামী লীগকে প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে চিহ্নিত করছে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, জাতীয় নাগরিক পার্টির আত্মপ্রকাশ বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করতে চলেছে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান থেকে উঠে আসা এই দলটি কতটা সফল হতে পারবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

‘ছাত্র-জনতা হত্যার সম্পূর্ণ বিচার নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত পরাজিত ফ্যাসিবাদী শক্তিকে রাজনীতি করতে না দেওয়ার সিদ্ধান্ত’ আপনি কি সমর্থন করেন?