হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টানসহ সকল ধর্মের লোকজনের উদ্দেশে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী একটি সাম্যের দেশ গড়তে চায়; যেখানে সকল ধর্মাবলম্বীর লোকজন আতঙ্কে থাকবে না। তারা এদেশে বসবাস করবে মর্যাদার সাথে। কেউ তাদের জানমাল এবং ইজ্জতে হাত দিবে না। সেইসাথে তিনি সাম্যের বাংলাদেশ গড়ার বাণী ঘরে ঘরে পৌঁছাতে জামায়াতের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান।
শনিবার (২৫ জানুয়ারি) দিনাজপুরের গোর-এ-শহীদ বড় ময়দানে বিশাল কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
কর্মী সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন দিনাজপুর জেলা আমীর অধ্যক্ষ আনিসুর রহমান। জেলা সেক্রেটারি ড. এনামুল হকের সঞ্চালনায় সম্মেলনে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চল পরিচালক মাওলানা আবদুল হালিম, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও রংপুর-দিনাজপুর অঞ্চলের সহকারী পরিচালক অধ্যক্ষ মাওলানা মমতাজ উদ্দিন, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ ও অঞ্চল টিম সদস্য অধ্যাপক মাহবুবুর রহমান বেলাল, কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরা সদস্য, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের সহকারী সেক্রেটারি মো: দেলোয়ার হোসেন।
তিনি বলেন, আমাদের সন্তানদের আশ্বস্ত করতে চাই, তোমরা যে বাংলাদেশের স্লোগান দিয়ে বলেছিলে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, আমরা তোমাদের সাথে আছি। তোমাদের অবদানের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। তোমরা আমাদের অহংকার আমাদের গর্ব। আগামির বাংলাদেশ আমরা তোমাদের হাতে তুলে দিতে চাই।
আমরা তোমাদের পাশে থেকে সহযোগিতা করতে চাই, দোয়া করতে চাই। মরার আগে দেখে যেতে চাই আমার প্রিয় বাংলাদেশ সাম্য এবং সৌহার্দ্যরে বাংলাদেশ। আমার প্রিয় বাংলাদেশ একটি মানবিক বাংলাদেশ। এই মানবিক বাংলাদেশের জন্যই আমাদের সংগ্রাম এবং সাধনা। সমবেতদের উদ্দেশে তিনি বলেন, এই সংগ্রামে আপনাদের পাশে চাই, সাথে চাই।
জামায়াতের আমীর বলেন, ছাত্র-জনতার লড়াই আর মজলুমানের চোখের পানির ফোটার কারণে আমরা এই নতুন দেশ পেয়েছি। বন্ধুদের আহ্বান জানাই এমন কথা এমন আচরণ না করি-যাতে আমাদের সন্তানরা মনে কষ্ট পায়।
কর্মী সম্মেলনে একজন হিন্দু ধর্মালম্বী অধ্যক্ষের বক্তব্যের সূত্র ধরে আমীরে জামায়াত বলেন, এখানে একজন হিন্দু ধর্মের সম্মানিত নেতা ভাই একটা কলেজের অধ্যক্ষ ছিলেন; তিনি বলেছেন এমন একটা বাংলাদেশে আমরা বসবাস করতে চাই, যে বাংলাদেশে আমাদের আর আতঙ্কে থাকতে হবে না।
আমি তাদের বলি কারা আতঙ্কমুক্ত বাংলাদেশ দিতে পারবে, সেই দলটাকে খুঁজে বের করুন। যারা বিগত ৫৪ বছরে আপনাদের জমাজমি দখল করেনি, আপনাদের সম্পদ লুন্ঠন করেনি, আপনাদের ইজ্জতের ওপর হাত দেয়নি। সেই দলকে আপনারা খুঁজে বের করুন। একটু বিবেকের চক্ষু দিয়ে খুঁজে দেখলেই, তাদের পেয়ে যাবেন।
তিনি আরও বলেন, আমি খুব বেশি দূরে যাবো না। এখন থেকে মাত্র ছয় মাস পেছনে যাবো। ৫ আগস্ট এই দেশে যুগান্তকারী পরিবর্তন হয়েছে। কেউ বলছে গণবিপ্লব, কেউ বলছে গণঅভ্যুত্থান। যে যেভাবেই বলুক আমরা প্রথমদিন থেকেই সচেতন ছিলাম। একটা কুচক্রী মহল যাদের বরাবরই খাসলত খারাপ; তারাই আবার সমাজে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে। এজন্য আমাদের সহকর্মী এবং দেশবাসীকে আহ্বান জানিয়েছিলাম, সতর্ক করেছিলাম। ধৈর্য ধরুন, শান্ত থাকুন।
শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতা করুন। এর আগে ওবায়দুল কাদের সাহেব কয়েকবার বলেছেন, আওয়ামী লীগ বিদায় নিলে তাদের রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের হাতে ক্ষমতা থেকে বিদায় কিংবা পালানোর দুই দিনের ভেতর তাদের ৫ লাখ নেতাকর্মীকে খুন করা হবে। তিনি প্রশ্ন রাখেন তাদের ৫ লাখ নেতাকর্মী কী খুন হয়েছে? মাঠ থেকে জবাব আসে ‘না’। তিনি বলেন, হয়নি এই কারণে যে, আওয়ামী লীগের হাত রক্তে লাল থাকতে পারে, তাদের চোখ খুনের নেশায় সব সময় মাতাল হতে পারে কিন্তু বাংলাদেশের সকল জনগণ তাদের মতো নয়।
এদেশের জনগণ তাদের দেশকে ভালবাসে, দেশের মাটিকে ভালবাসে। এজন্য তারা দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। এরপরও দুয়েকটা খুনের ঘটনা ঘটেছে। আমরা এর নিন্দা করেছি। আমরা চাই না, বিনা বিচারে যেই ধর্মের মানুষই হউক না কেন, তাদের একজন মানুষকেও খুন করা হউক। কেউ দোষী হলে বিচারের মাধ্যমে হবে। তবে বিচারের নামে অবিচারের মাধ্যমে নয়। সুবিচারের মাধ্যমে কেউ যদি অপরাধ করে তাকে শাস্তি দিতে হবে।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, এ বছরের শেষ দিকে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ বছরের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনিও মনে করেন?