যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর আরোপিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখার অনুরোধ জানিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে চিঠি পাঠিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।
সোমবার প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় বিষয়টি নিশ্চিত করে জানায়, এই চিঠির মাধ্যমে বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চলমান বাণিজ্য আলোচনা ও সহযোগিতার ক্ষেত্র সম্প্রসারণে নতুন মাত্রা যুক্ত হলো।
প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং এক বিবৃতিতে জানায়, চিঠিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে অনুরোধ করা হয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালে বাংলাদেশে মার্কিন রপ্তানি বাড়ানোর উদ্যোগকে সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়নের সুযোগ দিতে বাংলাদেশের ওপর নতুন করে আরোপিত শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত রাখা হোক।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে প্রধান উপদেষ্টার উচ্চপর্যায়ের প্রতিনিধি ড. খলিলুর রহমান ওয়াশিংটন ডিসি সফর করেন। সফরকালে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে বাণিজ্য সম্পর্ক উন্নয়নে সক্রিয় পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। এরপর থেকেই উভয়পক্ষ নিবিড়ভাবে কাজ করছে এবং সুনির্দিষ্ট কিছু উদ্যোগ বাস্তবায়নের পথে রয়েছে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশই দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যের ওপর সবচেয়ে কম হারে শুল্ক আরোপকারী দেশ, যা দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে ইতিবাচক দিক।
প্রধান উপদেষ্টার পাঠানো চিঠিতে বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপের বিস্তারিত বিবরণ তুলে ধরা হয়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে তুলা, গম, ভুট্টা, সয়াবিনসহ কৃষিপণ্য আমদানিতে আগ্রহী এবং এই খাতগুলোতে আমদানি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হবে, যাতে মার্কিন কৃষকরা সরাসরি উপকৃত হন।
এছাড়া গ্যাস টারবাইন, সেমিকন্ডাক্টর ও চিকিৎসা সরঞ্জামের মতো যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ রপ্তানি পণ্যের ওপর শুল্ক হ্রাসের বিষয়টিও চিঠিতে উল্লেখ করা হয়। এসব পণ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক সুবিধা সম্প্রসারণের পাশাপাশি মান ও প্রক্রিয়াগত সহজীকরণেও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।
চিঠিতে আরও জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের তুলার বাজার উন্নয়নে বাংলাদেশ ‘বন্ডেড ওয়্যারহাউজ’ প্রতিষ্ঠা করবে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের তুলা শুল্কমুক্ত সুবিধায় সংরক্ষণ ও সরবরাহ করা যাবে।
অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস তার চিঠিতে আরও বলেন, বাংলাদেশ পরীক্ষার কিছু বাধ্যবাধকতা তুলে দিচ্ছে, প্যাকেজিং, লেবেলিং ও সার্টিফিকেশন সংক্রান্ত নিয়ম শিথিল করছে এবং শুল্ক প্রক্রিয়া ও মান নির্ধারণে সহজীকরণ করছে, যা সরাসরি মার্কিন পণ্যের জন্য ইতিবাচক হবে।
চিঠির শেষ অংশে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে আশ্বস্ত করে অধ্যাপক ইউনূস লেখেন, “বাণিজ্য এজেন্ডাকে সম্পূর্ণরূপে সমর্থন করতে বাংলাদেশ প্রয়োজনীয় সকল পদক্ষেপ নেবে।”
প্রেস উইংয়ের বিবৃতিতে জানানো হয়, বাণিজ্য উপদেষ্টাও শিগগিরই যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি বরাবর পৃথক আরেকটি চিঠি পাঠাবেন, যেখানে বাংলাদেশের নেওয়া পদক্ষেপসমূহের বিস্তারিত তুলে ধরা হবে।
এই চিঠি বিনিময় এবং অনুরোধমূলক উদ্যোগের মাধ্যমে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর আরোপিত শুল্ক হ্রাসে কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক তৎপরতা নতুন গতি পেতে যাচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা আশা করছেন।

বাংলাদেশের পুলিশ, র্যাব ও আনসারের ড্রেস নিয়ে আপনার মতামত কী?