জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বাংলাদেশকে লক্ষ্য করে ছড়ানো মিথ্যা তথ্য ও অপপ্রচারের বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। শনিবার রাজধানীর হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে যৌথ সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা জানান।
সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, গুতেরেসের এ সফর ভুল তথ্য ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ইতিবাচক ও শক্তিশালী অবস্থান তুলে ধরবে। তিনি বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ার জটিলতা স্বীকার করেছেন এবং গণতন্ত্রে উত্তরণের জন্য সুষ্ঠু নির্বাচনের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন।
হোসেন আরও বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়ায় জাতিসংঘের পূর্ণ সমর্থনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। গুতেরেস নিশ্চিত করেছেন যে, তিনি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রচেষ্টাকে সহায়তা করবেন এবং বাংলাদেশের জনগণের পাশে থাকবেন।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সমর্থন বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ ও সংস্কার কার্যক্রমের জন্য সহায়ক হবে। তিনি উল্লেখ করেন, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে জনগণের আকাঙ্ক্ষা বোঝার জন্য মহাসচিব যুব সমাজ, সুশীল সমাজ এবং সংস্কার কমিশনের সদস্যদের সঙ্গে তিনটি বৈঠকে অংশ নিয়েছেন।
সংস্কার বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, এসব বৈঠক বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণ এবং জুলাই সনদের ভিত্তিতে রাজনৈতিক, বিচার বিভাগীয়, প্রশাসনিক, দুর্নীতি দমন, পুলিশ ও নির্বাচন সংক্রান্ত সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করছে।
তিনি বলেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের রমজান সংহতি সফর জাতিসংঘে বাংলাদেশের সদস্যপদ লাভের ৫০ বছর পূর্তিতে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যা উভয় পক্ষের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।
উপদেষ্টা হোসেন বলেন, ন্যায়পরায়ণ, গণতান্ত্রিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের প্রেক্ষাপটে জাতিসংঘ মহাসচিব নতুন বাংলাদেশের গঠনমূলক ধাপ প্রত্যক্ষ করছেন।
তিনি আরও বলেন, সফরের অংশ হিসেবে গুতেরেস কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন এবং জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত জনগোষ্ঠীর প্রতি সংহতি প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে, তিনি রোহিঙ্গাদের মর্যাদা, নিরাপত্তা ও অধিকারের সঙ্গে মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছেন।
ক্যাম্প পরিদর্শনকালে জাতিসংঘ মহাসচিব রোহিঙ্গা শিশু ও তরুণদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন এবং তাদের প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়নের বিষয়ে খোঁজ নেন। তিনি দেখেন, কীভাবে তারা টিকে থাকার কৌশল শিখছে এবং মাতৃভূমিতে নিরাপদ প্রত্যাবর্তনের প্রস্তুতি নিচ্ছে।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ এক লাখেরও বেশি রোহিঙ্গার সঙ্গে জাতিসংঘ মহাসচিবের ঐতিহাসিক সংহতি ইফতার একটি গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। এটি রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি আন্তর্জাতিক মনোযোগ আকর্ষণের পাশাপাশি, বাংলাদেশের মানবিক অবস্থানের প্রতিফলন ঘটিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর এবং তার সমর্থনের প্রতিশ্রুতি বাংলাদেশের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া, গণতন্ত্রে উত্তরণ এবং রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত বলে সন্দেহ করছেন অনেকে। আপনি কী মনে করেন?