জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, বাংলাদেশের চলমান সংস্কার ও কাঠামোগত পরিবর্তনের ক্ষেত্রে জাতিসংঘ সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখবে। শুক্রবার (১৪ মার্চ) দুপুর সাড়ে ১১টার দিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্যোগের প্রশংসা করেন এবং উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস, অন্তর্বর্তী সরকার ও বাংলাদেশের জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, “বাংলাদেশের বর্তমান সংস্কার ও পরিবর্তনে জাতিসংঘ সবসময় পাশে থাকবে।” তিনি আরও বলেন, “আমি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বাংলাদেশের জনগণকে তাদের উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য ধন্যবাদ জানাই।”
এর আগে, বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস চার দিনের সফরে ঢাকায় পৌঁছান। হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। সফরের অংশ হিসেবে শুক্রবার সকালে প্রথমে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন এবং পরে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক উচ্চ প্রতিনিধি খলিলুর রহমান জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন।
সকাল ১০টার দিকে জাতিসংঘ মহাসচিব প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে পৌঁছান এবং সেখানে ড. ইউনূসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি, গণতান্ত্রিক সংস্কার প্রক্রিয়া, মানবাধিকার পরিস্থিতি এবং রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ নিয়ে আলোচনা হয়। জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশে চলমান পরিবর্তনের ভূয়সী প্রশংসা করেন এবং নির্বাচন, মানবাধিকার এবং আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের নেয়া উদ্যোগকে সমর্থন জানান।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে, জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস বলেন, “বাংলাদেশ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয় দিয়ে মানবতার যে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে, তা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য অনুকরণীয়।” তিনি আরও বলেন, “জাতিসংঘ কক্সবাজারে রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার সুরক্ষা, খাদ্য সহায়তা, শিক্ষার সুযোগ এবং নিরাপদ প্রত্যাবাসনের বিষয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে।”
জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরকে বাংলাদেশের কূটনৈতিক মহলে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, তার এই সফরের মাধ্যমে বাংলাদেশ-জাতিসংঘ সম্পর্ক আরও দৃঢ় হবে এবং ভবিষ্যতে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সহযোগিতা, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এবং মানবাধিকার উন্নয়নে জাতিসংঘের কার্যক্রম জোরদার হবে।
আগামীকাল শনিবার (১৫ মার্চ) জাতিসংঘ মহাসচিবের ঢাকা কার্যালয় পরিদর্শন এবং পরে জাতীয় ঐকমত্য কমিশন ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে। এছাড়া, প্রধান উপদেষ্টার আয়োজিত এক নৈশভোজে জাতিসংঘ মহাসচিবের অংশগ্রহণের কথা রয়েছে। সফরের শেষ দিনে তিনি সংবাদ সম্মেলন করবেন, যেখানে তিনি বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পরিস্থিতি নিয়ে জাতিসংঘের দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরবেন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর বাংলাদেশের চলমান সংস্কার প্রক্রিয়াকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি এনে দেবে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা। একইসঙ্গে, জাতিসংঘের সমর্থন বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক পরিকল্পনাকে আরও সুসংহত করতে সহায়ক হবে।

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত বলে সন্দেহ করছেন অনেকে। আপনি কী মনে করেন?