জুলাই গণঅভ্যুত্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) শিক্ষার্থীদের ওপর সংঘটিত সহিংস হামলার ঘটনায় শতাধিক হামলাকারীকে চিহ্নিত করেছে তথ্যানুসন্ধান কমিটি। ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঘটে যাওয়া এসব হামলার পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাবির উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খানের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঢাবি উপাচার্য অফিস সংলগ্ন লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত এ অনুষ্ঠানে তথ্যানুসন্ধান কমিটির আহ্বায়ক ও আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল ইসলাম সুপন ৫৫০ পৃষ্ঠার বিশদ প্রতিবেদন জমা দেন। প্রতিবেদনে হামলাকারীদের নাম, সংশ্লিষ্ট তথ্য ও হামলার পদ্ধতি উল্লেখ করা হয়েছে।
প্রতিবেদন জমাদান শেষে অধ্যাপক কাজী মাহফুজুল ইসলাম সুপন বলেন, “জুলাই আন্দোলনের সময় ১৫ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত ঢাবি ক্যাম্পাসে সংঘটিত প্রতিটি হামলার তথ্য সংগ্রহ করে আমরা এ প্রতিবেদন তৈরি করেছি। বিশেষ করে ১৫ জুলাই পরিকল্পিতভাবে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালানো হয়, যেখানে ১২২ জন শিক্ষার্থীর সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে।”
তিনি আরও জানান, হামলার ঘটনায় বহিরাগতদের সম্পৃক্ততারও যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটে প্রতিবেদন অনুমোদিত হলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ পাঠানো হবে। যেসব হামলাকারী কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নন, তাদের বিরুদ্ধে মামলার সুপারিশ করা হয়েছে।
অধ্যাপক সুপন বলেন, “মল চত্বরে হামলাকারীদের মাথায় সাদা ক্যাপ ছিল, যা তাদের সংঘবদ্ধ পরিকল্পনার ইঙ্গিত দেয়। হামলার পর আহত শিক্ষার্থীরা যখন ঢাকা মেডিক্যালে চিকিৎসা নিতে যান, তখনও তাদের ওপর হামলা চালানো হয়। এমনকি, হাসপাতালের ডাক্তারদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা না দিতে। এতে প্রশাসনের যোগসাজশ থাকতে পারে বলে আমরা মনে করছি, যা পূর্বপরিকল্পিত হামলারই অংশ।”
প্রতিবেদন তৈরির পদ্ধতি নিয়ে তিনি বলেন, “তদন্তকালে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ খোঁজার সময় দেখা গেছে, হার্ডডিস্কগুলো সরিয়ে ফেলা হয়েছে। ফলে আমরা শিক্ষার্থীদের কাছে মেইল ও ফোন নম্বর পাঠিয়ে হামলার ছবি ও ভিডিও সংগ্রহ করেছি। পাশাপাশি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সংবাদ বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে।”
শিক্ষকদের সম্পৃক্ততা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “হামলার সময় অন্তত ৭০ জন শিক্ষক শিক্ষার্থীদের জামাত-শিবির, ছাত্রদল কিংবা রাজাকার হিসেবে ট্যাগিং করেছেন, যা আন্দোলনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। কারণ শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেন। কিছু শিক্ষক তাদের ভূমিকার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন, যা প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”
প্রতিবেদন জমাদানের সময় উপস্থিত ছিলেন ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক নিয়াজ আহমেদ খান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক সাইমা হক বিদিশা, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী, আইন অনুষদের ভারপ্রাপ্ত ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ ইকরামুল ইসলামসহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য শিক্ষকরা।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই প্রতিবেদন ঢাবির সাম্প্রতিক আন্দোলন ও সহিংসতার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান স্পষ্ট করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তবে প্রতিবেদনটি সিন্ডিকেটে অনুমোদিত হলে পরবর্তী সময়ে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ববিদ্যালয় কী পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তা বিশেষ গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করা হবে।

বাংলাদেশের পুলিশ, র্যাব ও আনসারের ড্রেস নিয়ে আপনার মতামত কী?