প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ২৮ মার্চ চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মোহাম্মদ রফিকুল আলম আজ এক সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাপ্তাহিক ব্রিফিংকালে এক প্রশ্নের উত্তরে রফিকুল আলম জানান, ২৬ মার্চ বিকেলে অধ্যাপক ইউনূসের চীনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগের কথা রয়েছে। ২৭ মার্চ তিনি বোয়াও ফোরাম ফর এশিয়া অ্যানুয়াল কনফারেন্সের উদ্বোধনী পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনে যোগ দেবেন এবং সেখানে ভাষণ দেবেন। ফোরামটি এশিয়ার অর্থনৈতিক ও কৌশলগত বিষয়াবলী নিয়ে আলোচনার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত, যেখানে এশিয়ার বিভিন্ন দেশের নেতৃবৃন্দ অংশ নেন।
এরপর, প্রধান উপদেষ্টার চীনের স্টেট কাউন্সিলের নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্টের সঙ্গে বৈঠকেরও পরিকল্পনা রয়েছে। এ বৈঠকে বাংলাদেশ-চীন দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক জোরদার, বিনিয়োগ সহযোগিতা, অবকাঠামো উন্নয়ন এবং বাণিজ্য সহযোগিতার বিষয়গুলো গুরুত্ব পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
২৮ মার্চ বেইজিংয়ে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠকে বসবেন অধ্যাপক ইউনূস। এ বৈঠকে আঞ্চলিক নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ, চীনা প্রযুক্তি স্থানান্তর, বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) আওতায় চলমান প্রকল্পসমূহ এবং রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন বিষয়ে আলোচনা হবে বলে কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে।
এরপর, ২৯ মার্চ সকালে ইউনূস চীনের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। সেখানে তিনি শিক্ষা ও প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ-চীন সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করে বক্তব্য রাখবেন। ওইদিন রাতেই তার ঢাকায় ফিরে আসার কথা রয়েছে।
এ সফরকে কেন্দ্র করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে এবং দ্বিপাক্ষিক আলোচনার জন্য বাংলাদেশের প্রধান এজেন্ডাগুলো চূড়ান্ত করতে পররাষ্ট্র সচিবের নেতৃত্বে একটি আন্তঃমন্ত্রণালয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। সফর সম্পর্কে আরও বিস্তারিত তথ্য জানাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শিগগিরই একটি প্রেস ব্রিফিং করবে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বর্তমান ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে চীন সফর বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে বৈশ্বিক মন্দার প্রেক্ষাপটে চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা বৃদ্ধি, চলমান অবকাঠামো প্রকল্পের বাস্তবায়ন এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতে বাংলাদেশের কৌশলগত অবস্থান স্পষ্ট করার জন্য এই সফর অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হতে পারে। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে চীনের মধ্যস্থতা কীভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারে, সে বিষয়টিও আলোচনায় উঠে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
চীন বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অর্থনৈতিক অংশীদার। দেশটির বিনিয়োগে বাংলাদেশে একাধিক মেগা প্রকল্প চলমান রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ, কর্ণফুলী টানেল, মাতারবাড়ী বিদ্যুৎ প্রকল্পসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প। এছাড়া, বাণিজ্যে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার, রোহিঙ্গা সংকট, প্রযুক্তি বিনিময় এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়েও দুই দেশের মধ্যে আলোচনা হবে বলে কূটনৈতিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, অধ্যাপক ইউনূসের এ সফর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারে এবং বাংলাদেশের কৌশলগত স্বার্থ রক্ষায় চীনের সঙ্গে দীর্ঘমেয়াদী অংশীদারিত্ব জোরদারে সহায়ক হতে পারে।

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত বলে সন্দেহ করছেন অনেকে। আপনি কী মনে করেন?