বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কার্যকর উদ্যোগ ও ব্যবসার জন্য নীতিগত সহায়তার ফলে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারে স্থিতিশীলতা ফিরেছে, যা ভোক্তাদের মধ্যে স্বস্তি এনে দিয়েছে। তিনি বলেন, দীর্ঘমেয়াদে এই গতি ধরে রাখতে হলে নীতিগত বিষয়গুলো সহজ করতে হবে এবং স্থানীয় উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে আমদানির ঘাটতি পূরণ করতে হবে।
সচিবালয়ে তার কার্যালয়ে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, বাজার ব্যবস্থাপনা ও সরবরাহ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে সাময়িক হলেও বাজারে স্বস্তি ফিরে এসেছে। তবে বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটি ভঙ্গুর অর্থনৈতিক অবস্থা পেয়েছিল। বিশেষ করে গত বছরের জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের অর্থনীতি স্থবির হয়ে পড়ে, যার ফলে সরবরাহ ব্যবস্থায় ঘাটতি দেখা দেয়। এই অবস্থায় অন্তর্বর্তী সরকার দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে বাজার ব্যবস্থাপনায় শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়।
বাণিজ্য উপদেষ্টা জানান, সাম্প্রতিক সময়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ ও মূল্য স্থিতিশীল রাখতে অর্থ মন্ত্রণালয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) একসঙ্গে কাজ করছে। বাণিজ্য নীতি সহজ করা, শুল্ক সমন্বয় এবং বাজার পর্যবেক্ষণ জোরদার করার ফলে পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত হয়েছে।
তিনি উদাহরণ হিসেবে বলেন, আলুর বাজারে ঘাটতি দেখা দেওয়ায় দাম রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল। তবে সরকার নীতিগত সহায়তা দিয়ে বাজার নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে তিনি বলেন, কৃষকদের স্বার্থও রক্ষা করতে হবে, যেন তারা ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখা ও কৃষকদের রক্ষা করা—এই দুই দিক বিবেচনায় রেখে সরকার পরিকল্পিতভাবে এগোচ্ছে।
ভোজ্যতেলের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত রাইস ব্রান তেল বাজারে আনতে সরকার নীতিগত সহায়তা দিচ্ছে। পাশাপাশি দেশের চাহিদা মেটাতে সয়াবিন তেল ও পামওয়েল আমদানি অব্যাহত রয়েছে। দেশীয় সরিষার তেলের উৎপাদনও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ফলে ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহার মতো বড় উৎসবেও ভোজ্যতেলের ঘাটতি হবে না।
শেখ বশিরউদ্দিন বলেন, শুধু ভোজ্যতেল নয়, শাক-সবজি, চাল, ডিম, গরুর মাংস, খাসির মাংস ও মুরগির মাংসের সরবরাহ নিশ্চিত করাও গুরুত্বপূর্ণ। তবে এটি শুধু বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নয়, বরং রাষ্ট্রীয় পরিকল্পনার মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, সরকার হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্যের ওপর যৌক্তিক নীতিমালা তৈরির বিষয়টি বিবেচনা করছে, যাতে কৃষকরা লাভবান হতে পারেন এবং উৎপাদন খরচও সহনীয় থাকে। হাঁস-মুরগি ও মাছের খাদ্য যদি আমদানি নির্ভর হয়, তবে এ ক্ষেত্রে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকবে।
বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করতে সরকার বাণিজ্য নীতি ও ব্যবসা পরিচালনার নিয়ম সহজ করেছে। এর ফলে স্থানীয় উৎপাদন বাড়বে এবং বাজারে স্থিতিশীলতা বজায় থাকবে। বর্তমান সরকারের উদ্যোগের ফলে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে দেশীয় উৎপাদন বাড়ানোর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে, যা সামগ্রিকভাবে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করবে।

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত বলে সন্দেহ করছেন অনেকে। আপনি কী মনে করেন?