মাগুরায় নির্মম নির্যাতনের শিকার হওয়া আট বছরের শিশুটির শারীরিক অবস্থার সামান্য উন্নতি হয়েছে। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর প্রথমবারের মতো সে চোখের পাতা নেড়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। তবে এখনও আশঙ্কামুক্ত নয় শিশুটি।
সোমবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আব্দুল কালাম আজাদ মজুমদার এই তথ্য জানান। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টার প্রতিরক্ষা বিষয়ক বিশেষ সহকারী লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আব্দুল হাফিজ নিয়মিত চিকিৎসকদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন এবং শিশুটির সর্বশেষ অবস্থা পর্যবেক্ষণ করছেন। চিকিৎসকদের বরাত দিয়ে তিনি জানান, শিশুটির শারীরিক অবস্থার খুব সামান্য উন্নতি হয়েছে। তবে শ্বাসরোধের কারণে মস্তিষ্কে অক্সিজেন সরবরাহ বিঘ্নিত হওয়ায় সেখানে পানি জমে গেছে, যা এখনও অপসারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে বুকের মধ্যে জমে থাকা বাতাস অপসারণ করা হয়েছে, যা কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে। চিকিৎসকরা আশাবাদী, আগামী দুই-এক দিনের মধ্যে শিশুটির অবস্থার আরও উন্নতি হবে।
গত ৬ মার্চ মাগুরার নান্দুয়ালী এলাকায় বোনের শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার হয় শিশুটি। অভিযুক্ত ব্যক্তি, হিটু শেখ (৫০), তার নৃশংস লালসার শিকার বানায় অসহায় শিশুটিকে। ঘটনার পরপরই শিশুটিকে অচেতন অবস্থায় প্রথমে মাগুরা সদর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে সেখান থেকে রাতেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। ৭ মার্চ রাতে শিশুটির শারীরিক পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয় এবং পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) স্থানান্তর করা হয়।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, শিশুটির যৌনাঙ্গে গুরুতর ক্ষত রয়েছে। এছাড়া গলায় ফাঁস লাগানোর চিহ্ন এবং বুকে প্রচণ্ড চাপের কারণে অভ্যন্তরীণ ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। চিকিৎসকরা জানান, ফুসফুসের এমন স্থানে বাতাস ঢুকে গেছে, যেখানে থাকার কথা নয়। ফলে শিশুটির শ্বাস-প্রশ্বাসে জটিলতা দেখা দিয়েছে। রোববার সকালে অস্ত্রোপচার করে বুকের অতিরিক্ত বাতাস বের করার জন্য একটি টিউব স্থাপন করা হয়েছে। তবে অক্সিজেন স্বল্পতার কারণে শিশুটির মস্তিষ্কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, যার ফলে খিঁচুনি হয়েছে।
এদিকে নৃশংস এই অপরাধের ঘটনায় পুলিশ চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে, যার মধ্যে রয়েছে শিশুটির দুলাভাই ও দুলাভাইয়ের বাবা। আদালতে শুনানি শেষে হিটু শেখকে সাত দিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে, অন্য তিন আসামি—সজীব হোসেন, রাতুল শেখ ও জাবেদা বেগমের রিমান্ড মঞ্জুর হয়েছে পাঁচ দিন করে। রোববার রাত ১২টার দিকে মাগুরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. আব্দুল মতিনের আদালতে শুনানি শেষে এই রিমান্ড আদেশ দেওয়া হয়।
এদিকে, ধর্ষণের শিকার শিশুটির ছবি, ভিডিও এবং পরিচয় সংক্রান্ত তথ্য বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ পাওয়ার পর, বিষয়টি আমলে নিয়ে হাইকোর্ট দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আদালত বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি), সাইবার ক্রাইম ইউনিট ও পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছে, যেন অবিলম্বে এসব তথ্য অপসারণ করা হয়। একই সঙ্গে, যারা ইতোমধ্যে ভিকটিমের পরিচয় প্রকাশ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ১৪ ধারা অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। দুই আইনজীবী ব্যারিস্টার মাহসিব হোসাইন ও হামিদুল মেসবাহ এ বিষয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করলে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ রোববার এই আদেশ দেন।
এই পাশবিক ঘটনায় সারা দেশে নিন্দার ঝড় উঠেছে। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে মানবাধিকার কর্মী, রাজনীতিবিদ এবং বিভিন্ন সংগঠন ধর্ষকের দ্রুত বিচার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানিয়েছে। শিশু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কঠোর আইন বাস্তবায়নের জন্য সরকারকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিভিন্ন মহল। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দ্রুত বিচারের আশ্বাস দিয়েছে প্রশাসন।

বাংলাদেশের পুলিশ, র্যাব ও আনসারের ড্রেস নিয়ে আপনার মতামত কী?