ঢাকা মহানগরের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং জননিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আকস্মিকভাবে কয়েকটি থানা পরিদর্শনে নেমেছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ থানাগুলোর কার্যক্রম সরাসরি পর্যবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থার সার্বিক অবস্থা পর্যালোচনার জন্য সোমবার ভোর থেকেই তিনি এ কার্যক্রম শুরু করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা ফয়সল হাসান জানান, স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এদিন ভোর থেকে পর্যায়ক্রমে তেজগাঁও, কলাবাগান, শাহবাগ এবং নিউমার্কেট থানাসহ রাজধানীর আরও কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ থানা পরিদর্শন করছেন। এই পরিদর্শনের মূল লক্ষ্য হচ্ছে সাম্প্রতিক সময়ে নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম এবং পুলিশের দায়িত্ব পালনের অবস্থা সরেজমিনে দেখা।
পরিদর্শনের সময় প্রতিটি থানার দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। তিনি থানাগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, মামলা নিষ্পত্তির গতি, অপরাধ দমন কার্যক্রম এবং সাধারণ নাগরিকদের সেবাপ্রাপ্তির বিষয়টি ঘনিষ্ঠভাবে পর্যালোচনা করেন। এছাড়া থানার নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং জনসাধারণের প্রতি পুলিশের আচরণ সম্পর্কেও বিস্তারিত খোঁজ নেন।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার আকস্মিক এই পরিদর্শনের খবর ছড়িয়ে পড়লে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোতে তৎপরতা বেড়ে যায়। অনেক থানায় দায়িত্বরত কর্মকর্তারা পরিদর্শনের বিষয়ে আগে থেকে অবগত ছিলেন না, ফলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা থানার কর্মপরিকল্পনা এবং দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পর্কে বাস্তবচিত্র দেখতে পান।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী থানাগুলোতে উপস্থিত হয়ে অপরাধ দমন, মামলা পরিচালনা এবং পুলিশের তৎপরতার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। তিনি পুলিশ সদস্যদের সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করার নির্দেশ দেন এবং জনগণের সেবা নিশ্চিত করার বিষয়ে গুরুত্বারোপ করেন।
তিনি বলেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে জনগণের আস্থার প্রতীক হতে হবে। অপরাধ দমনে পুলিশকে আরও সক্রিয় এবং নিষ্ঠাবান হতে হবে। কোনো ধরনের গাফিলতি বরদাশত করা হবে না।”
রাজধানীতে সাম্প্রতিক সময়ে ছিনতাই, মাদক চোরাচালান, নারী নির্যাতন ও যানজটসহ বিভিন্ন সমস্যা বেড়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও কঠোর হওয়ার আহ্বান জানান তিনি। থানাগুলোতে আধুনিক প্রযুক্তি ও ক্যামেরার ব্যবহার বৃদ্ধি, টহল ব্যবস্থা জোরদার এবং অপরাধ দমনে বিশেষ উদ্যোগ নেওয়ারও নির্দেশ দেন।
তিনি আরও বলেন, “জনগণের নিরাপত্তা ও স্বস্তি নিশ্চিত করাই আমাদের অগ্রাধিকার। এজন্য আমরা নিয়মিতভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করছি, যাতে কোথাও কোনো দুর্বলতা না থাকে।”
পরিদর্শন শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা নগরীর অপরাধ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ করে সংশ্লিষ্ট থানাগুলোর জন্য পৃথক দিকনির্দেশনা দেন। পাশাপাশি, নগরীর আইনশৃঙ্খলা আরও সুসংহত করতে গোয়েন্দা কার্যক্রম বাড়ানোর উপরও গুরুত্ব দেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এ ধরনের আকস্মিক পরিদর্শন অব্যাহত থাকবে। নগরীর নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে আরও বেশ কিছু থানায় এই ধরনের পরিদর্শন পরিকল্পনা করা হয়েছে, যেখানে বিশেষ নজর দেওয়া হবে অপরাধ দমন কার্যক্রম, পুলিশের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা এবং জনগণের প্রতি সেবার মানোন্নয়নের ওপর।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার এই আকস্মিক পরিদর্শন সাধারণ জনগণের মাঝে ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মনে করছেন, পুলিশের কার্যক্রম সরাসরি মনিটরিংয়ের ফলে পুলিশের সেবার মান উন্নত হবে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।
তবে, অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য শুধু পরিদর্শন যথেষ্ট নয় বলে মনে করছেন আইনশৃঙ্খলা বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, অপরাধ দমনে কেবল পুলিশ বাহিনীর মনিটরিং নয়, বরং প্রশাসনিক কাঠামোরও শক্তিশালী সংস্কার প্রয়োজন, যাতে পুলিশ বাহিনী আরও দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে পারে।
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরীর আকস্মিক পরিদর্শন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে সাধারণ নাগরিকদের প্রত্যাশা, সরকারের কঠোর নজরদারিতে রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির আরও উন্নতি হবে এবং জনগণ আরও নিরাপদ ও সুশৃঙ্খল একটি শহর ফিরে পাবে।

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত বলে সন্দেহ করছেন অনেকে। আপনি কী মনে করেন?