২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর উল্লাসে মেতে ওঠে সারাদেশ। ওই দিন দুপুরের পর থেকেই সব শ্রেণি-পেশার মানুষ বিজয় মিছিল নিয়ে নেমে পড়ে রাস্তায়। সেই মিছিলে পুলিশ ও আওয়ামী সমর্থিত বিভিন্ন সংগঠনের সন্ত্রাসীদের এলোপাথাড়ি গুলিতে শাহাদত বরণ করেন আল আমিন।
৫ আগস্ট দুপুরে সারাদেশের মানুষের মত রাজধানীর বাড্ডা এলাকায়ও আনন্দ মিছিলে নামে উৎফুল্ল জনতা। মিছিলে যোগ দেন আল আমিন হোসেন আগমন চিশতীও।
পুরো রাজধানী জুড়ে যখন মানুষের বিজয় উৎসব চলছে তখনও বাড্ডা এলাকায় পুলিশ এবং আওয়ামীলিগ ও এর বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সন্ত্রাসীরা এলোপাথাড়ি গুলি চালায়। এর এক পর্যায়ে একটি গুলি আল আমিনের মাথায় লাগে। উপস্থিত ছাত্র-জনতা তাকে দ্রুত ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়, কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয়নি। দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
আল আমিন হোসেন আগমনের গ্রামের বাড়ি বরগুনা সদর উপজেলার নাপিতখালী গ্রামে। তার বাবা হানিফ চিশতী (৬৬)। মা মনিহার বেগম (৪৬)। আল আমিনের তিনটি ছোট বোন রয়েছে। তিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলেন । স্বেচ্ছাসেবক দল ভাটারা থানার যুগ্ম আহ্বায়কের দায়িত্বে ছিলেন আল আমিন।
রাজধানীর পল্টনের অফিসে রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসস-এর প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আল আমিন হোসেন চিশতীর বাবা হানিফ চিশতী এসব কথা বলেন।
শহীদ আল আমিন দরিদ্র মানুষকে সবসময় সাহায্য করতেন জানিয়ে বাবা হানিফ চিশতী বলেন, ছেলেটা আমার শান্ত স্বভাবের ছিল। সে দরিদ্র মানুষকে সহযোগিতা করত। কার ঘরে খাবার নেই, কে টাকার অভাবে চিকিৎসা করাতে পারছে না-খোঁজ নিয়ে সবাইকে সহযোগিতা করত। আমার ছেলেটার জন্য মহল্লার মানুষ এখনও কাঁদে।
৫ আগস্ট দুপুর ৩ টার দিকে বাড্ডা থানায় প্রবেশের মুখের রাস্তায় (ফুলকলি মিষ্টির দোকানের সামনে) গুলিবিদ্ধ হন তিনি। ৬ আগস্ট বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সামনে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কেন্দ্রীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন। এরপর আল আমিনের লাশ ৭ আগস্ট দুপুরের দিকে বরগুনার নাপিত খালি গ্রামে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
বাবা হানিফ চিশতী বলেন, ‘ও আমার একমাত্র সন্তান ছিল। বিএনপির রাজনীতি করার কারণে বিগত ১৬ বছর ওর সাথে আমার ঠিক মত দেখা হয়নি। পুলিশের গ্রেফতারের ভয়ে সে কখন কোথায় থেকেছে তার ঠিক ছিল না।’
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন যখন শুরু হয় তখন থেকেই সে আন্দোলনে সক্রিয় হয়ে পডে। বাসায় ঠিক মত আসত না। ফোনেই ওর সাথে বেশি যোগাযোগ হত।আমি অফিসের কাজে ব্যস্ত থাকতাম।
শহীদ আল আমিনের বাবা হানিফ চিশতী বলেন, বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে আমার এক আত্মীয় ফোন করে জানায় আল আমিনের গুলি লাগছে। এই কথা শুনে বলি, কোথায় আছে আল আমিন? তখন সে বলে বাড্ডায় যেতে। আমি সেখানে গিয়ে শুনি ওকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়েছে। পরে অনেক কষ্ট করে ঢাকা মেডিকেলে যাই।
সেদিন পুরো ঢাকা ছিল মিছিলের নগরী। ঢাকা মেডিকেলে পৌঁছে দেখে একের পর এক লাশ আর আহত রোগী আসছে। চারদিকে শুধু মানুষের কান্নার রোল। পরে অনেক সময় খোঁজাখুজি করে মর্গে গিয়ে আল আমিনের লাশ পাই। দেখি, গুলিতে ঝাঁজরা রক্তমাখা নিথর দেহ পড়ে আছে। ডাক্তার বলেন, আপনার ছেলে মারা গেছে, দ্রুত লাশ নিয়ে যান।
গণ-অভ্যুত্থানে শহীদ আল আমিনের মা মনিহার বেগম বলেন, ‘যার সন্তান হারায়নি, সে সন্তান হারানোর যন্ত্রণা বুঝবে না। এখনো শুনতে পাই, আল আমিন আমাকে মা মা বলে ডাকছে। কিন্তু আমার বাবা তো চলে গেছে অনেক দূরে। বিগত ১৬ বছর আমার ছেলেডারে ঠিক মত রান্না করে খাওয়াতে পারি নাই।’
আল আমিন হোসেন শহীদ হওয়ার ঘটনায় ২১ সেপ্টেম্বর বাড্ডা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন তাঁর মা মনিহার বেগম। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়াও এই মামলায় আরও ২৯ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বাংলাদেশের পুলিশ, র্যাব ও আনসারের ড্রেস নিয়ে আপনার মতামত কী?