ফ্যাক্ট-চেকিং প্রতিষ্ঠান রিউমার স্ক্যানারের সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে প্রমাণিত হয়েছে যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা, প্রেস সচিব এবং জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের নেতাদের নামে ছড়িয়ে পড়া বাইনান্স অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশট সম্পূর্ণ ভুয়া এবং ভিত্তিহীন। এটি প্রযুক্তিগত কারসাজির মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে এবং অনির্ভরযোগ্য সূত্র থেকে প্রচারিত হয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একাধিক স্ক্রিনশট ভাইরাল হয়েছে, যেখানে দাবি করা হয়েছে যে, অন্তর্বর্তী সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের নামে থাকা বাইনান্স অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ বিটকয়েন জমা রয়েছে, যার বাজারমূল্য শত শত কোটি টাকা। এই দাবিকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক মহলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি ভারতে আশ্রিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদ জয় তার ফেসবুক পোস্টে এই স্ক্রিনশট শেয়ার করেন, যা পরে ভারতের কিছু গণমাধ্যমও প্রচার করে।
তবে রিউমার স্ক্যানারের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই স্ক্রিনশটগুলো আসলে প্রযুক্তিগত কারসাজির ফসল। এগুলো তৈরি করা হয়েছে ‘ইন্সপেক্ট টুল’ নামক একটি ব্রাউজার ফিচার ব্যবহার করে, যা ওয়েবসাইটের কোড সাময়িকভাবে পরিবর্তন করে যে কোনো তথ্য সাজিয়ে দেখানোর সুযোগ দেয়। প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরা রিউমার স্ক্যানারের কাছে প্রমাণ করেছেন যে, শুধুমাত্র ইউজার আইডি ব্যবহার করে বাইনান্সের কোনো অ্যাকাউন্টের ব্যালেন্স দেখা সম্ভব নয়। এজন্য অ্যাকাউন্টে লগইন করে ‘ওয়ালেট’ অপশনে যেতে হয়, যা এই ভাইরাল স্ক্রিনশটগুলোর ক্ষেত্রে সম্ভব হয়নি।
এই ভুয়া প্রচারণার সূত্র খুঁজতে গিয়ে রিউমার স্ক্যানার দেখতে পায়, ‘দ্য এশিয়া পোস্ট নিউজ’ নামের একটি নামসর্বস্ব পোর্টাল প্রথম এই তথ্য প্রকাশ করে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২০ নভেম্বর চালু হওয়া এই ওয়েবসাইটের কার্যক্রম অত্যন্ত সীমিত। এর ফেসবুক পেজে মাত্র ৩৩ জন ফলোয়ার, আর এক্স (সাবেক টুইটার) অ্যাকাউন্টে রয়েছে মাত্র ৮ জন ফলোয়ার। এটির কোনো সম্পাদক, প্রকাশক বা পরিচালকের নাম উল্লেখ নেই, এমনকি অফিসের কোনো ঠিকানাও নেই। ডোমেইন বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ওয়েবসাইটটি ২০২৪ সালের ২৫ অক্টোবর নিবন্ধিত হয়েছে, যা স্পষ্টতই জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের পরবর্তী সময়ে গুজব ছড়ানোর জন্য তৈরি করা হয়েছে।
এই ভুয়া প্রচারণা সামনে আসার পর রিউমার স্ক্যানার আরও বিশ্লেষণ চালায় এবং তারা একেবারে একই ধরনের স্ক্রিনশট তৈরি করে দেখায়, যেখানে শুধু অ্যাকাউন্টের নাম পরিবর্তন করে শেখ হাসিনার পুত্র সজীব ওয়াজেদের নাম বসিয়ে দেওয়া হয়। এই পরীক্ষা প্রমাণ করেছে যে, প্রচারিত স্ক্রিনশটগুলো শতভাগ মিথ্যা এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তৈরি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, সজীব ওয়াজেদ জয় ফেসবুকে এই স্ক্রিনশট শেয়ার করার পরপরই তার পোস্টে অসংখ্য মন্তব্য আসে, যেখানে সাধারণ ব্যবহারকারীসহ প্রযুক্তি বিশেষজ্ঞরাও স্ক্রিনশটগুলো ভুয়া বলে দাবি করেন। ব্যাপক সমালোচনার মুখে মাত্র এক ঘণ্টার ব্যবধানে জয় পোস্টটি মুছে ফেলতে বাধ্য হন।
এ ঘটনার পর রিউমার স্ক্যানার স্পষ্টভাবে জানায়, অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা, প্রেস সচিব এবং জুলাই-আগস্ট আন্দোলনের নেতাদের নামে প্রচারিত বাইনান্স অ্যাকাউন্টের স্ক্রিনশট ও তাদের বিরুদ্ধে আনা দুর্নীতির অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এটি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে এবং জনগণকে বিভ্রান্ত করার একটি অপচেষ্টা ছাড়া কিছুই নয়।

বাংলাদেশের পুলিশ, র্যাব ও আনসারের ড্রেস নিয়ে আপনার মতামত কী?