অন্তর্বর্তী সরকারের নতুন তথ্য উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন মাহফুজ আলম। গতকাল মঙ্গলবার মো. নাহিদ ইসলাম এই পদ থেকে পদত্যাগ করায় সরকার দ্রুত নতুন নিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়, যার ফলে মাহফুজ আলম তার স্থলাভিষিক্ত হচ্ছেন। শিগগিরই এ সংক্রান্ত আনুষ্ঠানিক প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে বলে জানা গেছে।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, সাধারণত তথ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা বা মন্ত্রী সরকারের মুখপাত্র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সে অনুযায়ী, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের মধ্য থেকেই তথ্য উপদেষ্টা নিয়োগ দেওয়ার বিষয়ে সরকারের শীর্ষ মহল একমত হয়েছে।
নাহিদ ইসলামের পদত্যাগের খবর প্রকাশের পর থেকেই নতুন উপদেষ্টা কে হচ্ছেন, তা নিয়ে নানা আলোচনা শুরু হয়। প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের নাম আলোচনায় এলেও তাকে নতুন পদে আনার সম্ভাবনা খুবই কম। সম্প্রতি তিনি সিনিয়র সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন, ফলে তথ্য উপদেষ্টার পদে অন্য কাউকে নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা করছে সরকার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, মাহফুজ আলমকেই তথ্য ও সম্প্রচার এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। তিনি এর আগে গত বছরের ১০ নভেম্বর উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নিলেও কোনো নির্দিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাননি। এর আগে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের মাত্র ২০ দিনের মাথায়, ২৮ আগস্ট, তাকে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ থেকে স্নাতক সম্পন্ন করা মাহফুজ আলম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ছিলেন এবং পতিত হাসিনা সরকারবিরোধী আন্দোলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। আন্তর্জাতিক পরিসরে তার রাজনৈতিক ও কৌশলগত দক্ষতা তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রের একটি অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টা তাকে এই আন্দোলনের ‘মাস্টারমাইন্ড’ হিসেবে পরিচয় করিয়ে দেন।
গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারের সঙ্গে ছাত্র ও নাগরিক সমাজের সংযোগ রক্ষার জন্য যে লিয়াজোঁ কমিটি গঠন করা হয়, সেখানে মাহফুজ আলম মূল সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করেন। অভ্যুত্থানের সময় তার কৌশলগত পরামর্শ এবং গণমাধ্যম ও ডিজিটাল যোগাযোগের ওপর দক্ষতা তাকে এই গুরুত্বপূর্ণ পদে বসানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করা হচ্ছে।
তবে মাহফুজ আলম দায়িত্ব গ্রহণের পর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের অধীনে নীতিনির্ধারণী কিছু বড় পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম লক্ষ্য গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত সাংবাদিকতার পরিবেশ তৈরি করা। মাহফুজ আলমের নিয়োগ সেই পরিকল্পনারই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
এদিকে, তার নিয়োগের খবরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন এবং আশা করছেন যে, নতুন তথ্য উপদেষ্টা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। তবে সরকারবিরোধী কিছু মহল এই নিয়োগের সমালোচনা করেছে এবং সরকারের তথ্য প্রচারে নতুন ধরনের কৌশল গ্রহণ করা হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে।
এই পরিবর্তনের ফলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের নতুন কাঠামো কীভাবে গড়ে ওঠে এবং এর মাধ্যমে সরকারের যোগাযোগ ব্যবস্থায় কী ধরনের পরিবর্তন আসে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

সচিবালয়ে আগুনের ঘটনা পরিকল্পিত বলে সন্দেহ করছেন অনেকে। আপনি কী মনে করেন?