পতিত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতাকে দীর্ঘস্থায়ী করতে ভিন্নমত দমনের জন্য দেশে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার একটি পরিকল্পিত সংস্কৃতি চালু করেছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, শেখ হাসিনার সেই গুম-খুনের নির্দেশনা বাস্তবায়নের অন্যতম প্রধান নায়ক ছিলেন সাবেক সেনা কর্মকর্তা মেজর জেনারেল (অব.) জিয়াউল আহসান।
বুধবার গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যার ঘটনায় জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিলের পর এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এসব কথা বলেন চিফ প্রসিকিউটর।
মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম জানান, জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় পৃথকভাবে একটি ফরমাল চার্জ দাখিল করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে তিনটি প্রধান অভিযোগ আনা হয়েছে, যেগুলোর মাধ্যমে শতাধিক মানুষকে গুম করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ মিলেছে।
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, প্রথম অভিযোগ অনুযায়ী গাজীপুরের র্যাব কার্যালয় থেকে রাতে পাঁচজনকে টঙ্গীর নির্জন এলাকায় নিয়ে গিয়ে চোখ ও হাত-পা বেঁধে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। পরে তাদের লাশ ড্রেন কিংবা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়।
দ্বিতীয় অভিযোগে বলা হয়, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভিন্নমতাবলম্বীদের গুম করে বরগুনার চরদুয়ানি ঘাটে নিয়ে যাওয়া হতো। সেখানে রাতের আঁধারে ট্রলারে করে বলেশ্বর নদী হয়ে সুন্দরবন সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে নিয়ে গিয়ে মাথায় বালিশ ঠেকিয়ে গুলি করে হত্যা করা হতো। এরপর লাশের পেট ফেড়ে সিমেন্টের বস্তা বা ইট বেঁধে নদীতে ফেলে দেওয়া হতো। এভাবে অন্তত ৫০ জনকে হত্যার অভিযোগে চার্জ দাখিল করা হয়েছে।
তিনি আরও জানান, একই পদ্ধতিতে প্রায় ৩০০ মানুষ হত্যার তথ্যও তদন্তে উঠে এসেছে।
তৃতীয় অভিযোগে বলা হয়, সুন্দরবনে বনদস্যু দমনের নামে পরিচালিত অপারেশনের আড়ালে গুম হওয়া ব্যক্তিদের হত্যা করা হতো এবং পরে তা ‘বন্দুকযুদ্ধ’ হিসেবে প্রচার করা হতো।
চিফ প্রসিকিউটর জানান, আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট জারি করেছে। পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২১ ডিসেম্বর দিন ধার্য করা হয়েছে এবং ওই দিন তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।