প্রতিটি মুহূর্তই আমাদের জন্য একটি নতুন সুযোগ, একটি নতুন সম্ভাবনা। মহান রব আমাদেরকে ডেকে বলেন, এখনো সময় আছে, সাচ্চা তাওবা করে কল্যাণের পথে ফিরে এসো। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, যারা আল্লাহর পথে ফিরে আসে না, তারা এই মহান নিয়ামতের সুফল ভোগ করতে পারে না। তাদের জীবনের প্রতিটি দিন তাদের বদ আমলের পাল্লা ভারী করে। যদি তারা মৃত্যুর আগে তাওবা না করে, তবে তাদের প্রতিটি দিন অভিশাপ হয়ে দাঁড়ায়।
তাই আজ আমরা জানবো, কীভাবে একটি নতুন সকাল আমাদের জন্য কল্যাণের দ্বার উন্মোচন করতে পারে এবং আমাদের পাপের পথ থেকে ফিরে আসার সুযোগ দান করে। ইনশাআল্লাহ,
১. প্রতিটি সকাল নতুন সুযোগ
প্রতিটি সকালই আমাদের জীবনের একটি নতুন সুযোগ, এবং জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া প্রতিটি দিন মহান আল্লাহর কাছে নিকৃষ্ট হয়ে ওঠে অথবা উৎকৃষ্ট হয়। হাদিসে এসেছে, আবু বকর রা.-এর প্রশ্নের উত্তরে রসুল সা. বলেছেন, যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল সুন্দর করেছে, সে উত্তম ব্যক্তি। কিন্তু যে দীর্ঘ জীবন পেয়েছে এবং তার আমল খারাপ করেছে, সে নিকৃষ্ট ব্যক্তি। (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৩০)
এই হাদিসটি আমাদের জানায়, দীর্ঘ জীবনের সুযোগ যদি পাপকর্মে ব্যয় করা হয়, তবে তা বড়ই দুর্ভাগ্যজনক।
২. পরিণতি ও ফিরে আসা
আল্লাহর পথে ফিরে আসা ও তাওবা করার প্রেরণা মুমিনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মুমিনের জন্য প্রতিটি নতুন সকাল অগণিত কল্যাণের দ্বার উন্মোচন করে। নবীজি সা. তাঁর কন্যা ফাতেমা রা. -কে বলেছেন, মামণি! ওঠো! তোমার রবের পক্ষ থেকে রিজিক গ্রহণ করো! (আত-তারগিব ওয়াত তারহিব : ২৬১৬)
এই উপদেশের মাধ্যমে আমাদের শেখানো হয়, অলসতা পরিহার করে সক্রিয়ভাবে আল্লাহর স্মরণ করা এবং জীবনকে শুদ্ধতার পথে ফিরিয়ে নিয়ে আসা।
৩. জীবনকে মূল্যায়ন করা
মুমিনের উচিত প্রতিটি নতুন সকালকে মহান আল্লাহর ইবাদত ও শোকরের মাধ্যমে যথাযথ মূল্যায়ন করা এবং সারা দিন নিজেকে আল্লাহর নাফরমানি থেকে মুক্ত রাখার দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা। রসুল সা. বলেছেন, আদমসন্তান যখন সকালে উপনীত হয়, তখন তার সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ জিভকে অত্যন্ত বিনীতভাবে নিবেদন করে, ‘তুমি আমাদের ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো, কারণ আমাদের ব্যাপারসমূহ তোমার সঙ্গেই সম্পৃক্ত। যদি তুমি সোজা-সরল থাকো, তাহলে আমরাও সোজা-সরল থাকব। আর যদি তুমি বক্রতা অবলম্বন করো, তাহলে আমরাও বেঁকে বসব।(রিয়াদুস সালেহিন, হাদিস : ১৫২৯)
এই হাদিসটি আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে দেয়, প্রতিটি নতুন দিনের শুরুতে আল্লাহর ভয় ও জীবনকে মূল্যায়ন করা।
৪. সময়ের গুরুত্ব
তাছাড়া, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তই মূল্যবান, এবং কোনোভাবেই এই সুযোগকে দেরি করা উচিত নয়। কারণ, আমরা কেউ জানি না, মহান আল্লাহ আমাদের আরেকটি নতুন সকাল পর্যন্ত হায়াত দিয়েছেন কি না! এজন্য, মুমিনের উচিত প্রতিটি নতুন দিনের সঙ্গে মৃত্যুর কথা স্মরণ করা এবং আল্লাহ প্রদত্ত সুযোগকে কাজে লাগানো।
৫. শেষ কথা: জীবনকে গুরুত্ব দাও
মুজাহিদ রহ. একবার ইবনে উমার রা. -এর সাথে আলোচনা করতে গিয়ে বলেন, তুমি সকালে উপনীত হয়ে বিকেলের জন্য নিজেকে অস্তিত্ববান মনে কোরো না এবং বিকেলে উপনীত হয়ে সকালের জন্য নিজেকে অস্তিত্ববান মনে কোরো না (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৩৩)
এই হাদিসটির মাধ্যমে আমাদের শেখানো হয়, প্রতিটি দিনকে গুরুত্ব দিয়ে জীবনের সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে, কারণ আগামীকাল কী হবে, তা কেউ জানে না। আগামীকাল তুমি কী নামে অভিহিত হবে, তাও তুমিও জানো না।
এভাবে, প্রতিটি নতুন সকাল আমাদের জন্য একটি মহান সুযোগ, যদি আমরা যদি সঠিকভাবে কাজে লাগাই, তবে তা আমাদের জন্য কল্যাণ ও বরকতের পথ উন্মোচন করবে। নয়তো তা সারা জীবনের সুখের দ্বারকে বন্ধ করবে ।