গাজায় স্মরণকালের ভয়াবহ বর্বরতা চালাচ্ছে ইসরায়েল। প্রতিনিয়তই দীর্ঘ হচ্ছে লাশের সারি। গাজাবাসীর ক্রন্দনে ভারী হচ্ছে আকাশ-বাতাস। নারী-পুরুষ-শিশু নির্বিচারে হত্যা করছে দখলদার ইসরায়েল।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অস্ত্রশস্ত্র যাচ্ছে ইসরায়েলে। যার মধ্যে রয়েছে আমাদের প্রতিবেশি দেশ ভারতও।
গত বছরের জুনে ইসরায়েলের কাছে রকেট ও বিস্ফোরক রপ্তানি করেছিল ভারত। কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আল জাজিরা এই তথ্য জানিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
সেখানে বলা হয়েছিল- বোরকাম নামের একটি মালবাহী জাহাজ গত ১৫ মে ভোরে স্পেনের কার্তাহেনা বন্দরের উপকূলে এসে পৌঁছায়। পরে ফিলিস্তিনি পতাকা উড়িয়ে জাহাজটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ প্রকাশ করে স্পেনের জনগণ।
তাদের অভিযোগ, জাহাজে করে ইসরায়েলের জন্য অস্ত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। এ জন্য তারা কর্তৃপক্ষের কাছে এই ‘সন্দেহজনক’ জাহাজ পরিদর্শন করার আহ্বান জানায়।
তবে এই বিষয়ে দেশটির সরকার কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগেই বোরকাম নামের জাহাজটি স্লোভেনিয়ার বন্দর কোপারের উদ্দেশ্যে রওনা হয়ে যায়। তাই বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ আরও ঘনীভূত হয়।
আল জাজিরার হাতে কিছু নথি এসেছে, যা থেকে জানা গেছে জাহাজটিতে ভারত থেকে নিয়ে আসা বিস্ফোরক উপকরণ বোঝাই করা ছিল। আর এর শেষ গন্তব্য ছিল ইসরায়েলি বন্দর আশদোদ, যা গাজা উপত্যকা থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে।
গত ২ এপ্রিল চেন্নাই থেকে ছেড়ে আফ্রিকার পাশ দিয়ে ঘুরে গেছে জাহাজটি এবং লোহিত সাগরে হুতিদের সম্ভাব্য হামলা এড়াতে এই বিকল্প ব্যবহার করা হয় বলে মেরিন ট্র্যাকিং সাইটের তথ্য থেকে জানা গেছে।
সলিডারিটি নেটওয়ার্ক এগেইন্সট দ্য প্যালেস্টিনিয়ান অকুপেশান (রেসকপ) এসব নথি অনানুষ্ঠানিকভাবে সংগ্রহ করেছে। যা থেকে জানা গেছে, ওই জাহাজে ২০ টন রকেট ইঞ্জিন, সাড়ে ১২ টন বিস্ফোরক-যুক্ত রকেট, দেড় হাজার কেজি বিস্ফোরক এবং ৭৪০ কেজি চার্জ ও কামানের প্রপেলান্ট বোঝাই করা হয়েছিল।
জার্মানের প্রতিষ্ঠান এমএলবি ম্যানফ্রেড লতারজুং বেফ্রাখতুং বোরকাম জাহাজটির বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে আছে। এক বিবৃতিতে আল জাজিরাকে প্রতিষ্ঠানটি জানায়, জাহাজে এমন কোনো অস্ত্র বা মাল বোঝাই করা হয়নি যেটার গন্তব্য ইসরায়েল।
গত ২১ মে কার্তাহেনা বন্দরে ভারতের দ্বিতীয় একটি জাহাজ এসে পৌঁছালেও নোঙর করার অনুমতি দেওয়া হয়নি। স্পেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসে মানুয়েল আলবারেস বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের জন্য সামরিক পণ্য বহনকারী জাহাজটিকে স্পেনের বন্দরে ভিড়ার অনুমত দেওয়া হয়নি।
স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (সিপরি) গবেষক জেইন হুসেন আল জাজিরাকে বলেন, যাচাই করার মতো তথ্যের অভাবে এ ধরনের লেনদেন আদৌ ঘটেছে কী না, তা নিশ্চিত করে বলা খুবই কঠিন।
তবে বেশ কয়েক বছর ধরে ইসরায়েল ও ভারতের সম্পর্কের উন্নয়ন ঘটছে, তাই ভারতীয় অস্ত্র বা উপকরণ ইসরায়েলের হাতে এসে পৌঁছানোর এবং তা গাজায় ব্যবহার অসম্ভব কিছু নয়।
এসব ঘটনা থেকে মোটামুটি নিশ্চিত যে, ভারত ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র রপ্তানি করছে, যা দেশটির ‘সামরিক উদ্যোগ নয়, সংলাপের মাধ্যমে সমাধানের’ পররাষ্ট্রনীতির পরিপন্থী। বিশ্লেষকরা বলছেন, ভারতে আমদানি-রপ্তানি বিষয়ে স্বচ্ছতার অভাব থাকায় এ ধরনের লেনদেন সম্ভব হয়ে থাকতে পারে।
এর আগে ২০১৭ সালে ইসরায়েল সফরে গিয়েছিলেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেখানে গিয়ে ভূমধ্যসাগরে একসাথে ছবি উঠেছিলেন মোদি ও নেতানিয়াহু। যা ওই সময় ব্যাপক সমালোচনা কুড়িয়েছিলো।

জয় ও নিঝুম মজুমদারের এই আহ্বানকে দেশবিরোধী বলে মনে করেন ?