জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এবং বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস আগামী শুক্রবার কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে এক ব্যতিক্রমী ইফতার মাহফিলে অংশ নিতে যাচ্ছেন। প্রায় এক লাখ রোহিঙ্গার সঙ্গে এই ইফতার আয়োজনকে মানবিক ও কূটনৈতিকভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় থেকে জানানো হয়েছে, তার উদ্যোগেই এই ইফতার পার্টির আয়োজন করা হয়েছে, যা রোহিঙ্গাদের প্রতি বাংলাদেশের অব্যাহত সহমর্মিতা ও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সংহতির প্রতীক হিসেবে কাজ করবে।
রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে আয়োজিত এক মিডিয়া ব্রিফিংয়ে প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরে বলেন, এটি শুধু একটি ইফতার পার্টি নয়, বরং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সামনে বাংলাদেশ ও জাতিসংঘের সমন্বিত মানবিক প্রচেষ্টার একটি উদাহরণ। আগামীকাল বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ মহাসচিব চার দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন। সফরের অংশ হিসেবে তিনি কক্সবাজারের শরণার্থী শিবির পরিদর্শন করবেন এবং সেখানে রোহিঙ্গাদের বর্তমান অবস্থা সরাসরি পর্যবেক্ষণ করবেন।
২০১৭ সালের আগস্টে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সামরিক দমন-পীড়নের শিকার হয়ে সাত লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। বর্তমানে কক্সবাজার ও ভাসানচরে মোট রোহিঙ্গার সংখ্যা ১১ লাখেরও বেশি। যদিও বাংলাদেশ সরকার আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তায় রোহিঙ্গাদের সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে, তবে দীর্ঘমেয়াদী সমাধান এখনও অনিশ্চিত। জাতিসংঘের মতে, রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা জরুরি, তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে তা বাস্তবায়ন কঠিন। জাতিসংঘ মহাসচিবের এই সফর এবং ইফতার আয়োজনে অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারে এবং নতুন আলোচনার সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে।
অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেওয়ার পর এটি জাতিসংঘ মহাসচিবের প্রথম বাংলাদেশ সফর। তার সফরসূচিতে প্রধানমন্ত্রী ও অন্যান্য উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। পাশাপাশি, কক্সবাজার সফরকালে রোহিঙ্গাদের বর্তমান পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ এবং তাদের সঙ্গে সরাসরি মতবিনিময়ের পরিকল্পনা রয়েছে। কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই সফর আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর বাংলাদেশে রোহিঙ্গা সংকটের ওপর নতুন করে ফেরাতে পারে এবং বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানকে আরও জোরালো করতে সহায়তা করবে। প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস শুরু থেকেই রোহিঙ্গাদের মানবিক সহায়তা এবং তাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের পক্ষে ছিলেন। তার সরকারের অধীনে জাতিসংঘের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারত্ব আরও দৃঢ় হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
এই ইফতার আয়োজন রোহিঙ্গাদের প্রতি মানবিক সহমর্মিতার প্রকাশ হলেও এটি নিছক ধর্মীয় বা সামাজিক অনুষ্ঠান নয়। বরং এটি কূটনৈতিকভাবে একটি বড় বার্তা বহন করছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিসংঘ মহাসচিবের উপস্থিতিতে এই আয়োজন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নজর কক্সবাজারের দিকে আরও জোরালোভাবে ফেরাবে এবং রোহিঙ্গাদের দুর্দশা সমাধানের জন্য নতুন আলোচনা উসকে দেবে। এটি বাংলাদেশ সরকারের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ, কারণ দেশটি দীর্ঘদিন ধরে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে যাচ্ছে এবং এখন আন্তর্জাতিক মহলের সহযোগিতা আরও বেশি প্রয়োজন।
জাতিসংঘ মহাসচিবের সফরের ফলে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা ও মানবিক তহবিল বৃদ্ধি, নতুন কূটনৈতিক আলোচনা এবং প্রত্যাবাসনের সম্ভাবনা নিয়ে নতুন করে আলোচনা শুরু হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। বাংলাদেশের মানবিক উদ্যোগ ও আন্তর্জাতিক সংহতির প্রতীক হিসেবে এই ইফতার আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। জাতিসংঘ মহাসচিবের সফর এবং ইফতার অনুষ্ঠানে তার অংশগ্রহণ আন্তর্জাতিকভাবে রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করবে এবং সংকট সমাধানের জন্য নতুন কৌশল নির্ধারণে সাহায্য করতে পারে। এই সফরের মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ ও বাংলাদেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও দৃঢ় হবে এবং রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ভূমিকা নতুন মাত্রা পেতে পারে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

জয় ও নিঝুম মজুমদারের এই আহ্বানকে দেশবিরোধী বলে মনে করেন ?