আরব সাগরে নতুন সামরিক শক্তির প্রদর্শনী হিসেবে যৌথ মহড়ায় অংশ নিয়েছে রাশিয়া ও ইরান। ইরানের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় উপকূলে উভয় দেশের যুদ্ধজাহাজগুলোকে যৌথভাবে মহড়ায় অংশ নিতে দেখা গেছে। এটি সপ্তম যৌথ “মেরিটাইম সিকিউরিটি বেল্ট এক্সারসাইজ ২০২৫”, যেখানে চীনও অংশ নিচ্ছে। রোববার রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
এই মহড়ার অংশ হিসেবে রাশিয়ার করভেট “আলদার সাইদেনঝাপোভ” এবং ইরানের ফাস্ট অ্যাটাক ক্রাফট “নেইজেহ পি-২৩৫”-কে ইরানের কৌশলগত সামরিক ঘাঁটি “কোনারাক”-এর দিকে যেতে দেখা গেছে। পরবর্তীতে রুশ নাবিকরা এ সংক্রান্ত একটি সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেন, যেখানে রুশ ক্যাপ্টেন আলেকসেই আন্তসিফিরভ জানান, এই মহড়ার মূল উদ্দেশ্য হলো সামুদ্রিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং যে কোনো ধরনের হুমকি মোকাবিলায় যৌথ সহযোগিতা প্রতিষ্ঠা করা।
তিনি বলেন, “সাগরে যদি কোনো হুমকি পাই, তাহলে ইরান ও চীনের সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে তা মোকাবিলা করবো। চীন, ইরান ও রাশিয়ার মধ্যে ভালো সম্পর্ক রয়েছে এবং এই যৌথ সামরিক মহড়া এ অঞ্চলের নিরাপত্তাকে আরও শক্তিশালী করতে সহায়তা করবে।”
এই মহড়ায় চীনও তাদের শক্তিশালী নৌবাহিনীর উপস্থিতি নিশ্চিত করেছে। বেইজিং ঘোষণা দিয়েছে যে, চীনের টাইপ ওফাইভটুডি গাইডেড মিসাইল ডেস্ট্রয়ার ‘বাওতৌ’ এবং সাপ্লাই শিপ ‘গাওইউহো’ মহড়ায় অংশ নেবে। চীন এর আগেও এই ধরনের মহড়ায় অংশ নিয়েছে এবং এবারও ইরান ও রাশিয়ার সঙ্গে তাদের অংশগ্রহণ সামরিক কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
এই বহুজাতিক সামরিক মহড়ার গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলেছে এর পর্যবেক্ষক দেশগুলোর তালিকা। এবারের মহড়ায় পর্যবেক্ষক হিসেবে থাকছে আজারবাইজান, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওমান, কাজাখস্থান, পাকিস্তান, কাতার, ইরাক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও শ্রীলঙ্কা। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ধরনের বহুপাক্ষিক সামরিক মহড়া মধ্যপ্রাচ্য ও এশিয়া অঞ্চলের ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।
রাশিয়া, চীন ও ইরানের এই শক্তিশালী জোট সামুদ্রিক নিরাপত্তা রক্ষার নামে মূলত পশ্চিমা সামরিক প্রভাবের বিরুদ্ধে নিজেদের অবস্থান সুসংহত করছে বলে মনে করছেন আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। বিশেষ করে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্র দেশগুলোর নৌবাহিনীর প্রভাব মোকাবিলায় এই মহড়া নতুন কৌশলগত সমীকরণ তৈরি করতে পারে।
মধ্যপ্রাচ্যের কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল ও রাশিয়া-ইরান-চীনের ভূমিকা
এই মহড়া এমন এক সময়ে হচ্ছে যখন মধ্যপ্রাচ্য ও দক্ষিণ এশিয়ায় সামরিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ইরানের ওপর পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর হচ্ছে, চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নানা বাণিজ্যিক ও সামরিক পদক্ষেপ জোরদার হয়েছে এবং রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে ব্যস্ত থাকলেও আন্তর্জাতিক শক্তির সমীকরণে তাদের অবস্থান ধরে রাখার চেষ্টা করছে।
বহুপাক্ষিক এই মহড়া বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে, কারণ এটি এমন অঞ্চলে হচ্ছে যেখানে আমেরিকা ও তার মিত্রদের শক্তিশালী সামরিক উপস্থিতি রয়েছে। আরব সাগর ও পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলে এই যৌথ মহড়া নতুন ভূরাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে বলে ধারণা করছেন সামরিক বিশ্লেষকরা।
বিশ্লেষকদের মতে, এই সামরিক মহড়ার মাধ্যমে ইরান, রাশিয়া ও চীন তাদের শক্তিমত্তার প্রকাশ ঘটাচ্ছে এবং পশ্চিমা সামরিক শক্তির প্রভাব খর্ব করতে চাইছে। মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা ব্যবস্থায় এই ধরনের কৌশলগত পদক্ষেপ ভবিষ্যতে আরও বড় সামরিক জোটের দিকে ইঙ্গিত করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এই মহড়া কেবলমাত্র প্রশিক্ষণের জন্যই নয় বরং এটি একটি রাজনৈতিক বার্তা, যা পশ্চিমা শক্তিগুলোর জন্য সতর্কসংকেত হিসেবে কাজ করবে। এটি এমন এক সময় অনুষ্ঠিত হচ্ছে যখন যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা ইরানবিরোধী পদক্ষেপ বাড়াচ্ছে এবং রাশিয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর হচ্ছে। একইসঙ্গে, চীন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও প্রযুক্তিগত দ্বন্দ্বে লিপ্ত রয়েছে।
বিশ্ব রাজনীতির বর্তমান প্রেক্ষাপটে এই মহড়া আন্তর্জাতিক শক্তির নতুন মেরুকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে।

জয় ও নিঝুম মজুমদারের এই আহ্বানকে দেশবিরোধী বলে মনে করেন ?