জাতিসংঘের অফিসিয়াল ভাষা হিসেবে বাংলা অন্তর্ভুক্তির দাবি, আইনি নোটিশ পাঠালেন আইনজীবী
জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে অন্তর্ভুক্ত করার উদ্যোগ নিতে এবং দেশের সব সরকারি কার্যক্রমে বাংলা ভাষার বাধ্যতামূলক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী খন্দকার হাসান শাহরিয়ার।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) ডাক ও ই-মেইলের মাধ্যমে এই নোটিশ পাঠানো হয়েছে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সচিব, আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব, তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে।
৩০ দিনের মধ্যে ব্যবস্থা না নিলে আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি
নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে, ১৯৮৭ সালের বাংলা ভাষা প্রচলন আইন এর ৩ (১) ধারা অনুযায়ী, আগামী ৩০ দিনের মধ্যে দেশের সব সরকারি, আধাসরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে বাংলা ভাষার প্রচলন নিশ্চিত করতে হবে। বিদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ ছাড়া অন্য সব ক্ষেত্রে শুদ্ধ বাংলা ব্যবহারের বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়াও, অফিস-আদালতের নথি, চিঠিপত্র, আইনি প্রশ্নোত্তর ও বিতর্ক, আদালতের রায় ও আদেশসহ সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর সব নথিপত্র বাংলায় সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা নোটিশে উল্লেখ করা হয়েছে।
সাইনবোর্ড, নামফলক, বিজ্ঞাপন, নাটক, সিনেমা ও গণমাধ্যমে শুদ্ধ বাংলা ব্যবহারের ওপরও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। টেলিভিশন ও অনলাইন গণমাধ্যমে প্রচারিত সব বিজ্ঞাপনে বাংলার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার বিষয়েও নোটিশে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘে বাংলা ভাষা অন্তর্ভুক্তির দাবি
নোটিশে আরও বলা হয়েছে, বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এটি বাস্তবায়নে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ ও সাধারণ পরিষদে প্রস্তাব উত্থাপনসহ আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক প্রচেষ্টা জোরদার করতে হবে।
আইনি নোটিশে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, সরকার যদি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করে, তবে এই বিষয়ে উচ্চ আদালতে রিট আবেদন করা হবে।
বাংলা ভাষার মর্যাদা রক্ষায় সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর প্রতিক্রিয়া
আইনি নোটিশ পাঠানোর পরপরই ভাষা আন্দোলনের স্মারক প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন বিষয়টিকে স্বাগত জানিয়েছে। তাদের মতে, বাংলাদেশের সংবিধানে বাংলা ভাষার সর্বজনীন প্রচলনের কথা বলা হলেও বাস্তবে অনেক ক্ষেত্রেই বাংলা উপেক্ষিত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, জাতিসংঘের দাপ্তরিক ভাষা হিসেবে বাংলাকে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি দীর্ঘদিনের হলেও কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তবে, এই আইনি নোটিশ বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার পথে নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে বলে মনে করছেন অনেকে।
বাংলাদেশের জনগণ ভাষার জন্য রক্ত দিয়েছে, সেই ভাষার সম্মান প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের কী পদক্ষেপ নেয়, তা দেখার জন্য এখন সবাই অপেক্ষা করছে।

জয় ও নিঝুম মজুমদারের এই আহ্বানকে দেশবিরোধী বলে মনে করেন ?