ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে ব্যাপক কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। এর ফলে সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছে ভারতসহ বেশ কয়েকটি দেশ। ইতোমধ্যেই মার্কিন প্রশাসন কয়েকটি সামরিক বিমানে শিকলে বেঁধে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বহু ভারতীয়কে ফেরত পাঠিয়েছে। এই পরিস্থিতি নিয়ে ভারতে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
এর মধ্যেই নতুন করে আরেকটি সংকট দেখা দিয়েছে কানাডায়। কানাডা সরকার সম্প্রতি ভিসা সংক্রান্ত একটি কঠোর নীতি গ্রহণ করেছে, যা সেদেশে বসবাসরত ভারতীয় অভিবাসীদের জন্য আরও বড় সমস্যার কারণ হতে পারে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আমেরিকার পর এবার কানাডাও ভারতীয় অভিবাসীদের নিশানায় ফেলেছে। ভারত-কানাডা সম্পর্কের অস্থিরতার মধ্যে কানাডা প্রশাসন নতুন অভিবাসন নীতি গ্রহণ করেছে, যার ফলে বহু ভারতীয়র ভিসা বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। বিশেষ করে কর্মসংস্থান ও উচ্চশিক্ষার জন্য কানাডায় অবস্থানরত লাখ লাখ ভারতীয় এই সিদ্ধান্তের কারণে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে পারেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, খালিস্তানি বিতর্কের পর এবার ভিসা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো, যা ভারত ও কানাডার মধ্যে চলমান বিদ্বেষে নতুন মাত্রা যোগ করল। বর্তমানে কানাডায় অধ্যয়নরত ভারতীয় শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ২৭ হাজার। নতুন নীতির ফলে তাদের অনেকেই বিপাকে পড়বেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ভারতের আরেকটি সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, কানাডার নতুন অভিবাসন নীতি ভারতীয় কর্মী ও শিক্ষার্থীদের জন্য আরও বড় চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে যাচ্ছে। আগামী ৩১ জানুয়ারি, ২০২৫ থেকে কানাডার অভিবাসন নীতিতে কঠোর পরিবর্তন কার্যকর করা হবে, যার ফলে দেশটিতে বসবাসরত ভারতীয় অভিবাসীদের জন্য ভবিষ্যৎ আরও অনিশ্চিত হয়ে উঠবে।
গত কয়েক বছরে ভারত ও কানাডার মধ্যকার সম্পর্ক ক্রমশ জটিল হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে খালিস্তানি ইস্যুকে কেন্দ্র করে দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক টানাপোড়েন তীব্র হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও জার্মানির পর এবার কানাডাও ভারতীয় অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে বলে মনে করা হচ্ছে।
বিশ্লেষকদের মতে, কানাডার নতুন নীতি শুধু ভারতীয় অভিবাসীদের জন্য নয়, বরং সামগ্রিকভাবে বৈশ্বিক অভিবাসন ব্যবস্থার জন্যও একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় হতে পারে। এখন দেখার বিষয়, ভারত সরকার এই ইস্যুতে কী ধরনের কূটনৈতিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং ভারতীয় অভিবাসীদের স্বার্থ রক্ষায় কতটা কার্যকর ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয়।
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অধীনে আমেরিকা ইতোমধ্যেই ৩০০-রও বেশি ভারতীয় অভিবাসীকে ফেরত পাঠিয়েছে। ব্রিটেনেও অবৈধ অভিবাসীদের ধরপাকড় শুরু হয়েছে এবং সম্প্রতি জার্মানিতে ক্ষমতায় এসেছেন কট্টরপন্থি নেতা ফ্রেডরিখ মার্জ, যিনি সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ, শরণার্থী আইন এবং অভিবাসীদের সামাজিক সুবিধা নিয়ে কঠোর পদক্ষেপের কথা ঘোষণা করেছেন। এই পরিস্থিতির মধ্যে কানাডা অভিবাসন নীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে।
কানাডার গৃহীত নতুন নীতিতে ‘অস্থায়ী আবাসিক ভিসা’ বাতিলের নির্দেশ দিয়েছে। এর ফলে সে দেশে কাজ করতে যাওয়া ভারতীয় কর্মী এবং কানাডার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ভারতীয় ছাত্ররা ঝুঁকির মধ্যে পড়েছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই নীতির কারণে প্রায় ৪ লাখ ২৭ হাজার ভারতীয় ছাত্র এবং অনেক কর্মীরই ভিসা বাতিল হতে পারে।
তবে, এই নতুন নীতির প্রভাব শুধু ভারতীয় অভিবাসীদের ওপরই সীমাবদ্ধ থাকবে না। কানাডার অভিবাসন নীতি কঠোর হওয়ায়, দেশটিতে বিভিন্ন দেশের অভিবাসী কমিউনিটি সমস্যায় পড়বে। বিশেষত, যারা ওয়ার্ক ভিসা বা স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে কানাডায় আছেন, তাদের জন্য এখন নতুন করে আবেদন প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে এবং এই প্রক্রিয়া সহজ হবে না।

জয় ও নিঝুম মজুমদারের এই আহ্বানকে দেশবিরোধী বলে মনে করেন ?