ভারতের অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে গল্প মোদি সরকার বারবার প্রচার করে, সেটির বাস্তবতা একেবারেই ভিন্ন। সাম্প্রতিক এক গবেষণা মোদির অর্থনৈতিক ‘সুপারপাওয়ার’ দাবিকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছে। সমীক্ষাটি স্পষ্টভাবে দেখিয়েছে, ভারতের বিপুল জনগোষ্ঠী আর্থিক সংকটের মধ্যে রয়েছে, এবং দেশটির অর্থনীতি প্রকৃতপক্ষে গভীর সঙ্কটের মুখোমুখি।
বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ ভারতের অর্ধেক জনগোষ্ঠী আর্থিক দেউলিয়াত্বের দ্বারপ্রান্তে, যেখানে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনার কোনো সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা নেই। ইউগভ নামের একটি সংস্থা সম্প্রতি ভারতের ১২টি শহরে ৩৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী ৪ হাজার মানুষের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে, যেখানে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। সমীক্ষায় দেখা গেছে, দেশটির মধ্যবিত্ত শ্রেণি চরম অর্থনৈতিক চাপে আছে, যেখানে একদিকে তাদের বাবা-মায়ের দেখভাল করতে হচ্ছে, অন্যদিকে সন্তানের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত করতে গিয়ে নিজেরাই আর্থিকভাবে ভেঙে পড়ছেন।
গবেষণা অনুযায়ী, ৬০ শতাংশ মানুষ বিশ্বাস করেন যে, তারা যা উপার্জন করেন বা সঞ্চয় করেন, তা তাদের ভবিষ্যতের জন্য একেবারেই যথেষ্ট নয়। তারা আর্থিকভাবে এতটাই বিপর্যস্ত যে বৃদ্ধ বয়সে কীভাবে জীবনযাপন করবেন, তা নিয়ে প্রবল দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। আরও ভয়ঙ্কর তথ্য হলো, সমীক্ষায় অংশ নেওয়া ৯৪ শতাংশ মানুষের কোনো নির্দিষ্ট আর্থিক পরিকল্পনাই নেই। তারা হয় সম্পূর্ণ পরিকল্পনাহীনভাবে জীবনযাপন করছেন, অথবা স্বল্পমেয়াদী সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করছেন, যা তাদের ভবিষ্যতকে আরও অনিশ্চিত করে তুলছে।
ভারতের অর্থনৈতিক নীতির মারাত্মক ব্যর্থতার আরেকটি প্রমাণ হলো, ৩৫ থেকে ৫৪ বছর বয়সী অর্ধেকেরও বেশি মানুষের দাবি, পরিবারের ব্যয়ভার বহনের পর তাদের হাতে সঞ্চয়ের জন্য কোনো অর্থই অবশিষ্ট থাকে না। মধ্যবিত্ত শ্রেণির জীবনযাত্রার ব্যয় বেড়েই চলেছে, কিন্তু উপার্জনের সঙ্গে তার কোনো সামঞ্জস্য নেই। অথচ সরকার প্রতিনিয়ত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির গল্প শুনিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
এই গবেষণার ফলাফল মোদি সরকারের অর্থনৈতিক ব্যর্থতা স্পষ্টভাবে প্রমাণ করে দিয়েছে। যে ‘উন্নয়নের’ গল্প সরকার বলছে, সেটি শুধুমাত্র কাগজে-কলমে আছে, বাস্তবে দেশের জনগণ দারিদ্র্যের করাল গ্রাসে নিপতিত। কর্পোরেট প্রতিষ্ঠান ও ধনকুবেরদের উন্নতির নামে সাধারণ মানুষকে নিঃশেষ করে দেওয়া হচ্ছে, যা ভারতকে প্রকৃত অর্থেই এক ভয়াবহ অর্থনৈতিক সংকটের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।

জয় ও নিঝুম মজুমদারের এই আহ্বানকে দেশবিরোধী বলে মনে করেন ?