হাবিবুর রহমান সাগর। জাবি প্রতিনিধি
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের (৫৩ ব্যাচ) স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির নবীন শিক্ষার্থীদের প্রবেশিকা অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে শিক্ষার্থীদের মাঝে উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা লক্ষ্য করা গেছে।
বুধবার (২৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল সাড়ে এগারটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামরুল আহসানের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়।
এসময় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ।
অনুষ্ঠানে নবীন শিক্ষার্থীদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এতে বিভিন্ন অনুষদের প্রায় দুই হাজার নবীন শিক্ষার্থী অংশ নেন।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মো. এ বি এম আজিজুর রহমান নবীন শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ অনুষদের ডিনদের কাছে পাঠক্রম সম্পাদনের জন্য উপস্থাপন করেন এবং সংশ্লিষ্ট ডিনরা শিক্ষার্থীদের বরণ করে নেন।
সবশেষে, নবীন শিক্ষার্থীদের শপথ বাক্য পাঠ করান উপাচার্য ড. অধ্যাপক ড. কামরুল আহসান।
শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের অতিরিক্ত পরিচালক ড. আফসানা হকের সঞ্চালনায় স্বাগত বক্তব্যে রাখেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী কল্যাণ ও পরামর্শদান কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক ড. জামালউদ্দিন রুনু।
এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এম রাশিদুল আলম শিক্ষার্থীদের ছাত্র শৃঙ্খলা বিধি মেনে চলার আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. এস এম এ ফায়েজ নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলেন, তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এবং কঠিন ভর্তি পরীক্ষার মধ্যে দিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পেরে তোমরা সৌভাগ্যবান।
এই সুযোগকে সদ্ব্যবহার করতে হবে। উচ্চশিক্ষায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিমণ্ডল বিশাল। এই বিশালত্বের মধ্যে ভালো-মন্দ সবই রয়েছে। তোমরা ভালোকে গ্রহণ কর। নিজেকে শুদ্ধ, মার্জিত, রুচিশীল এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন সর্বোপরি একজন ভালো মানুষ হিসেবে গড়ে তোলো।
তিনি আরও বলেন, নবীন শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমি ভীষণ আশাবাদী। তোমরা যে অসীম সাহস নিয়ে ২০২৪ এ ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে রাজপথে নেমে স্বৈরাচারকে পালিয়ে যেতে বাধ্য করেছো, সেই সাহসের আলোকধারা প্রবাহিত হবে রাষ্ট্র ও সমাজ কাঠামোতে।
তোমরা নতুন বাংলাদেশ রচনা করবে, যেখানে ন্যায়, সাম্য, যুক্তি প্রাধান্য পাবে। মানুষে মানুষে পরস্পরের প্রতি সম্মান ও শ্রদ্ধায় মানবিকতার অনন্য নিদর্শন তোমরা ফুটিয়ে তুলবে।
২০২৪-এর জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে স্বৈরাচারী ফ্যাসিস্ট সরকার বিতরণে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখা এবং রাষ্ট্র বিনির্মাণে নবীন শিক্ষার্থীদের ভূমিকার প্রশংসা করে অনুষ্ঠানের সভাপতি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ কামরুল আহসান বলেন,
বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা ব্যবস্থার মূল কথা হচ্ছে জ্ঞান সৃষ্টি ও বিতরণ। রাষ্ট্রের সর্বস্তরের নাগরিকের করের টাকায় সরকারি/স্বায়ত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া ও যাবতীয় ব্যয়ের সিংহভাগ বহন করা হয়। পাশাপাশি অভিভাবকের কষ্টে অর্জিত অর্থে শিক্ষার্থীরা শিক্ষা অর্জন করে।
ফলে দেশবাসী এবং পরিবারের প্রতি তোমাদের নৈতিক ও যৌক্তিক দায়বদ্ধতা রয়েছে। এই দায়দায়িত্ব সম্পর্কে শিক্ষার্থীদের সচেতন হওয়ার ও পালন করার কোনো বিকল্প নেই।
তিনি আরও বলেন, মূল্যবোধের অবক্ষয়ের এই সময়ে বিজ্ঞানের নানা শাখায় জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জনের পাশাপাশি তাই নৈতিক শিক্ষা ও এর চর্চার গুরুত্ব অপরিসীম। উপাচার্য আরও বলেন, শিক্ষা শুধু পাঠ্যক্রমের মধ্যেই সীমিত নয়, সমাজ ও প্রকৃতির পরতে পরতে রয়েছে শিক্ষার উপকরণ।
নবীন শিক্ষার্থীরা এ উপলব্ধিকে ধারণ করবে এবং সকলেই নিজেকে মানবিক গুণসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলবে। মুক্তবুদ্ধির চর্চা করা, পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ প্রদর্শন এবং ভিন্নমত প্রকাশের পরিবেশ সৃষ্টির মাধ্যমে নিজেকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সম্পদ হিসেবে গড়ে তুলবে- এই আশাবাদ ব্যক্ত করছি।
এসময় বিশেষ অতিথির হিসেবে আরো বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. সোহেল আহমেদ এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মো. আব্দুর রবসহ প্রমুখ।