শেকৃবি প্রতিনিধি:
শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমনে সক্রিয় ভূমিকা রাখা, হুমকি প্রদান এবং দলীয় স্বার্থ রক্ষার অভিযোগে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় (শেকৃবি) ১২ জন শিক্ষক, ৭ জন কর্মকর্তা ও ১১ জন কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। সোমবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কমিটির তদন্তে উঠে এসেছে, অভিযুক্ত ব্যক্তিরা ২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে অনুষ্ঠিত ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন এবং প্রশাসনের সহযোগিতায় আন্দোলন দমন করেছিলেন। শিক্ষার্থীদের ওপর সহিংসতা চালানো, ভয় দেখানো এবং সরকারি দলীয় এজেন্ডা বাস্তবায়নে সক্রিয় থাকার অভিযোগও উঠে এসেছে।
তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ১০০ জন শিক্ষক, ৩০ জন কর্মকর্তা এবং আন্দোলনে জড়িত শতাধিক শিক্ষার্থীর তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। ২০ জন শিক্ষক, ১৫ জন কর্মকর্তা এবং ৩৫ জন শিক্ষার্থীর সাক্ষ্যের ভিত্তিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, অভিযুক্তরা দলীয় আনুগত্যের মাধ্যমে প্রশাসনের সহায়তায় আন্দোলন দমন করেন এবং শিক্ষার্থীদের ভয়ভীতি প্রদর্শন করেন। তদন্ত কমিটি আরও কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ করেছে।
সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বরখাস্ত শিক্ষকদের মধ্যে রয়েছেন অধ্যাপক ড. মো. হারুন-উর-রশিদ, ড. দেবু কুমার ভট্টাচার্য্য, অলি আহাদ সেতু, অধ্যাপক ড. শরমিন চৌধুরী, অধ্যাপক ড. মো. ফরহাদ হোসেন, অধ্যাপক ড. আয়েশা আক্তার, রুহুল আমিন, চৈতী দে পূজা, ড. ছাবেরা ইয়াসমীন, মো. ওমর আলী মল্লিক, অধ্যাপক ড. শাহ জহির রায়হান ও মো. জিয়াউর রহমান ভূঁঞা।
অন্যদিকে, বরখাস্ত কর্মকর্তাদের মধ্যে রয়েছেন ডেপুটি রেজিস্ট্রার হুমায়ুন কবীর, অতিরিক্ত পরিচালক (বহিরাঙ্গন) মোশাররফ হোসেন, সাবেক জনসংযোগ কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল রিপন, ডেপুটি রেজিস্ট্রার শহিদুল ইসলাম, ডেপুটি রেজিস্ট্রার ইব্রাহিম খলিল, উপ-পরিচালক ইলিয়াছুর রহমান এবং সহকারী পরিচালক শামসুল হক সাগর।
শ্রমিকদের মধ্যে বরখাস্ত হয়েছেন পলাশ কান্তি, শ্যামল চন্দ্র, জামান সরকার, আরিফুল ইসলাম, আলামিন, রুবেল, লুৎফর রহমান, কামাল, জমিরউদ্দীন ও সঞ্জিত সিংহ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. বেলাল হোসেন জানিয়েছেন, ৭ সদস্যের তদন্ত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী এই বরখাস্তদেশ জারি করা হয়েছে। সিন্ডিকেট থেকে তিন সদস্যের একটি চূড়ান্ত তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে, যা পরবর্তী তদন্ত শেষে স্থায়ী বরখাস্ত’র সিদ্ধান্ত নেবে।
এছাড়া, তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রশিদ ভূঁইয়া, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. অলোক কুমার পাল ও ট্রেজারার অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের বিপক্ষে তাদের ভূমিকার বিস্তারিত তথ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
শিক্ষার্থীরা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এ নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। আন্দোলনকারীরা বলছেন, প্রশাসনের এই উদ্যোগ ন্যায়বিচারের পথে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। তারা দোষীদের স্থায়ী বহিষ্কার এবং শিক্ষার্থীদের ওপর নিপীড়নে জড়িত সকল কর্মকর্তাকে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন।