জয়নাল আবেদিন প্রতিনিধিঃ
রাজশাহী জেলা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির সভাপতি মো: আবুল কালাম আজাদ এর নেতৃত্বে এখনো অনিয়ম-দুর্নীতি চলোমান।
এই বিষয়ে ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ এর কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন ‘অন্যারা টাকা তুলছে আমরাও তুলছি। ট্রাক মালিক সমিতির তো একটা খরচ আছে আমি কি এই খরচের টাকা বাসা থেকে নিয়ে এসে খরচ করবো। এটায় যদি হয় চিত্র তাহলে ৫ই আগষ্টের আন্দোলনের মূল্য কি থাকলো ? দীর্ঘ একযুগ ধরে অনিয়ম ও দুর্নীতি ভরা রাজশাহী জেলা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতি যেটা এখনো চলোমান।
আসুন ফিরে দেখি ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদের দীর্ঘ (১) যুগ।
দীর্ঘ একযুগ ধরে ট্রাক মালিক সমিতির কোন নির্বাচন হয় নাই। সভাপতি আবুল কালাম আজাদ তার পেশি শক্তি খাঁটিয়ে ও আওয়ামী স্বৈরাচার গত সরকার দলীয় রাজশাহী মহানগরের কিছু নেতাদের পৃষ্ঠপোষকতায় অবৈধ ভাবে সভাপতির চেয়ার দখল করে আছেন। আবুল কালাম আজাদ তার প্রভাব খাঁটিয়ে ট্রাক মালিক সমিতিতে কোন নির্বাচন ও করতে দেন নাই।
বিগত আওয়ামী স্বৈরাচার সরকারের শাসন আমলে স্বৈরাচার সরকারের হাতকে শক্তিশালী করতে ও তার চেয়ার ধরে রাখতে নির্বাচন থেকে শুরু করে এমন কোন অনৈতিক কর্মকান্ড নাই যে তিনি স্বৈরাচারী সরকারের কার্যকালাপে সহযোগিতা করেন নাই। এই স্বৈরাচারী কার্যকালাপের বিষয়ে জানতে চাইলে আবুল কালাম আজাদ বলেন, যখন যে দিক থেকে বৃষ্টি আসে সেদিকে ছাতা ধরে চলি।
তিনি সিটি করপোরেশনের নির্বাচন থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী স্বৈরাচার সরকারের হাতকে শক্তিশালী করতে স্বৈরাচারী সরকারের সকল নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর হয়ে মাঠে কাজ করেছেন। এখন তো স্বৈরাচার সরকারের পতন হয়েছে, ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ নিজেকে বিএনপির নিবেদিত প্রান বলে দাবি করছেন।
আমার প্রশ্ন জাতির বিবেকের কাছে? ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ কি সত্যিই বিএনপি আদর্শের মানুষ ? নাকি সে আওয়ামী মার্কা বিএনপি। ঢাকা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক দিয়ে
প্রতিদিন (১) এক থেকে সাড়ে ১২ শত যানবাহন চলাচল করে। এই চলাচল রত যানবাহন থেকে চারটি টোকেনের মাধ্যমে প্রতিটি ট্রাক, ট্যাংকলরি, কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক্টর থেকে ১০০ টাকা করে চাঁদা উঠানো হতো ৫ই আগষ্টের আন্দোলনের আগ পর্যন্ত রাজশাহী নগরীর নওদাপাড়া এলাকায়।
প্রতিদিন এই রুটে (১) এক থেকে সাড়ে ১২ শত যানবাহন দাঁড় করিয়ে ৭-৮ জন ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ এর নিজস্ব লাঠিয়াল বাহিনী দিয়ে মাসে অন্তত অর্ধ কোটি টাকা চাঁদা উত্তোলন করান। এই চাঁদা দৈর্ঘ্য (১) এক যুগ ধরে চলোমান ছিল ৫ই আগষ্টের আন্দোলনের আগ পর্যন্ত।
চাঁদা আদায় করে সভাপতি আবুল কালাম আজাদ গড়েছেন কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের পাহাড়।
এতে করে ট্রাক চালক ও মালিকদের মাঝে ব্যাপক ক্ষোভ দেখা দিলেও এর কোনো সমাধান হয়নি।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নগরীর নওদাপাড়া এলাকায় ট্রাক টার্মিনালের সামনে ঢাকা-চাঁপাইনাববগঞ্জ ও রাজশাহী নওগাঁ মহাসড়কের পাশে লাঠি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন ৭-৮ জন ব্যক্তি। ট্রাক টার্মিনালের সামনে আসামাত্র ট্রাকগুলো লাঠি হাতে নিয়ে ইশারা করে দাঁড় করাচ্ছেন তাঁরা।
এর পর সেই ট্রাক থেকে চারটি স্লিপ ধরিয়ে দিয়ে আদায় করা হচ্ছে ১০০ টাকা করে। এর মধ্যে ৩০ টাকার একটি স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে রাজশাহী ট্রাক টার্মিনালের ঠিকাদারের নামে, ৩০ টাকার আরেকটি স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে রাজশাহী জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি, কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়নের নামে, ৩০ টাকার অপর একটি সিল্প ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে রাজশাহী জেলা ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান মালিক সমিতির নামে এবং ১০
টাকার একটি স্লিপ ধরিয়ে দেওয়া হচ্ছে রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়ন পরিচালিত হাসপাতালের উন্নয়ন ব্যায়ের নামে। একইভাবে নগরীর বিআরটিএ ভবনের সামনেও ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও ট্যাংকলরি দাঁড় করিয়ে চাঁদা তোলা হচ্ছে। রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়ক হয়ে যেসব পন্যবাহী যানবাহন ঢাকার দিকে যাচ্ছে সেসব যানবাহন থেকে এখানে চাঁদা তোলা হচ্ছে।
চাঁদা প্রদানকারী একজন ট্রাক চালক লালন উদ্দিন বলেন,আমার কাছ থেকে গাড়ী দাঁড় করে ১০০ টাকা নিলো। পাথর বোঝাই ট্রাক হঠাৎ দাঁড় করাতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়েছিল। তার পরেও লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে থাকা শ্রমিকরা কয়েকটা রশিদ হাতে ধরে দিয়ে টাকা নিল। দিতে না চাইলে গাড়ী যেতে দিবে না তারা। তাই বাধ্য হয়ে চাঁদা দিতে হয়। এ যে চাঁদা উঠাচ্ছে, এই টাকার মুখ সাধারণ শ্রমকিরা কখনোই দেখতে পাই না। এই টাকা ভাগ হয় শ্রমিক এবং মালিক সমিতির নেতাদের মাঝে।’
তিনি আরও বলেন, ‘ট্রাক ট্রামিনালের নামে চলন্ত ট্রাক থেকে চাঁদাবাজির কোনো এখতিয়ার নাই। তার পরেও জোর করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে আমাদের কাছ থেকে।
অন্য ট্রাক চালক আসগর আলী বলেন, ‘স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর কয়েক দিন এখানে চাঁদাবাজি বন্ধ ছিল। হঠাৎ করে আবার শুরু হয়েছে। নিশ্চয় প্রশাসন আর নেতাদের ম্যানেজ করে এটি করা হচ্ছে। আমরা এই চাঁদাবাজি বন্ধের দাবি জানাচ্ছি। এখানে টাকা দিয়ে কোনো উপকার নাই।
বরং ট্রাক থামাতে গিয়ে ঝুঁকির মধ্যে পড়তে হয় আমাদের। প্রতিদিন (১) এক থেকে সাড়ে ১২ শত ট্রাকসহ বিভিন্ন পণ্যবাহী যানবাহন চলাচল করে। প্রতিটি পণ্যবাহী যানবাহন থেকেই তারা চারটি টোকেন ধরিয়ে দিয়ে ১০০ টাকা করে চাঁদা তুলছে। কিন্তু এ টাকার হদিশ পাই না আমরা শ্রমিকরা।’
চাঁদা আদায় বিষয়ে জানতে চাইলে রাজশাহী জেলা ট্রাক, ট্যাংকলরি, কাভার্ডভ্যান ও শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘রাস্তায় দাঁড় করিয়ে ট্রাক থেকে চাঁদাবাজির নিয়ম নাই। তার পরেও সংগঠন চালানোর জন্য করতে হচ্ছে। আমাদের টাকা শ্রমিকদের উন্নয়নের জন্য ব্যয় করা হয়।’ কিন্তুু বাস্তব চিত্র পুরোটাই উল্টো এই চাঁদার টাকা শ্রমিক ইউনিয়নের শ্রমিক উন্নয়ন ব্যয় হয় না। ব্যয় করা হয় সভাপতি আবুল কালাম আজাদ এর নিজের উন্নয়নে।
সম্প্রতি বিএনপি দলীয় কিছু নেতাদের সঙ্গে দফায় দফায় ঘরোয়া বৈঠক করছে আবুল কালাম আজাদ তার অনিয়ম-দুর্নীতি ধামাচাপা দিয়ে চেয়ার ধরে রাখরার জন্য। এই অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়ে ট্রাক মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলাল উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মালিক সমিতির মিটিংয়ে মালিকদের দীর্ঘ (১) এক যুগ ধরে আয় ব্যয়ের কোন হিসাব নিকাশ সভাপতি আবুল কালাম আজাদ প্রদান করেন নাই।
তিনি (১) এক যুগ ধরে সে কোন ব্যাংকের হিসাব দেন নাই। আবুল কালাম আজাদ যে নিজেকে বিএনপির নিবেদিত প্রান বলে দাবি করছেন এই বিষয়ে রাজশাহী মহানগর বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক নজরুল হুদার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির তিনি কেউ নয়।
আবুল কালাম আজাদ রাজশাহী মহানগর বিএনপির কখনো কোন পদে ছিলো না। ট্রাক মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কালাম আজাদ আওয়ামী স্বৈরাচার সরকারের দোষর। তিনি রাজশাহী সিটি করপোরেশনের নির্বাচন থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী স্বৈরাচার সরকারের হাতকে শক্তিশালী করতে স্বৈরাচারী সকল নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর হয়ে মাঠে কাজ করেছেন।

এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনি মনে করেন?