মজনুর রহমান আকাশ, মেহেরপুরঃ
মেহেরপুরের ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি তাপ প্রবাহ । খা খা রৌদ্র সেই সাথে তাপদাহ যেন আগুনের লেলিহান শিখায় রূপ ধারণ করেছে। সকাল ১০ টার পরপরই তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করে। একটানা বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত বয়ে চলা এই আবহাওয়ায় জনজীবনকে অতিষ্ঠ করে তোলে। বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া কেউ রাস্তাঘাটে বের হতে চাইছেন না। সব থেকে বিপাকে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। কাজ না করলে পেটে ভাত জুটবে না তাই এই তাপদাহকে উপেক্ষা করেও মাঠে বের হতে হচ্ছে। এতে অনেকেই পেটের পীড়াসহ নানা ধরনের অসুখে ভুগছেন।
আজ শনিবার বেলা তিনটায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গেল শুক্রবার বেলা তিনটায় জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করেছে ৩৯ দশমিক ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ১৮ শতাংশ। বৃহষ্পতিবার ছিল ৩৭ দশমিক ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস এবং বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ২৫ শতাংশ। তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ বইতে থাকায় জনজীবনে অস্বস্তি নেমে এসেছে। আগামীকাল রোববার তাপমাত্রা কমার সম্ভাবনা আছে প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জামিনুর রহমান
তীব্র গরম অনুভূত হওয়ায় জরুরি প্রয়োজন ছাড়া মানুষ ঘরের বাইরে বের হচ্ছেন না। যারা বের হচ্ছেন তারা ছাতা মাথায় অথবা রিকশায় চলাচল করছেন। তবে এর সংখ্যা খুবই কম। গরমের কারণে শহরে দিনের বেলা মানুষের উপস্থিতি কম। গরমের কারণে বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি তুলনামূলকভাবে অনেক কম। যে কারণে বেচাকেনায় প্রভাব পড়েছে বলে জানিয়েছেন গাংনী বাজার কমিটির সভাপতি সালাউদ্দীন শাওন।
চলমান তাপপ্রবাহে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন শ্রমজীবী মানুষ। তাপপ্রবাহ থেকে রক্ষা পেতে তাঁরা মাথায় টুপি অথবা গামছা নিয়ে চলাচল করছেন। কৃষিকাজে নিয়োজিত শ্রমিকেরা ক্লান্ত দেহ নিয়ে ছায়ায় বিশ্রাম করছেন। গরমের হাত থেকে শরীরকে শীতল করে জুড়িয়ে নিতে শহর থেকে কিশোর-যুবকেরা দল বেঁধে ছুটছে গ্রামাঞ্চলে নলকূপগুলোতে গোসল করতে।
মানিকদিয়া মাঠের ধানচাষি রফিকুল ইসলাম জানান, প্রচন্ড গরমে মাঠে কাজ করতে পারছেনা। সকাল ১১ টার পর রোদের তাপ বেড়ে যাচ্ছে। বেশি শ্রমিক লাগছে। ৫ জনের কাজ ১০ জন শ্রমিক দিয়ে করাতে হচ্ছে। মাটির নিচ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না পানির লেয়ার। যে ক্ষেতে এক ঘন্টায় সেচ করাজ শেষ হয় ওই জমিতে লাগছে অন্ততঃ তিন ঘন্টা। এমন তাপদাহ অব্যাহত থাকলে সব ধরনের ফসলের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। একই কথা জানালেন কৃষক শামসুল আলম।
গাংনী শহরের রিকশাচালক সাহারুল জানান, সারাদিন রিকশা চালিয়ে যা আয় হয় তা দিয়েই তার সংসার চলে। গত কয়েক দিন যাবত প্রচন্ড রোদে রিকশা চালাতে না পারাই সংসারে এসেছে অভাব অনটন। একই কথা জানালেন ইজিবাইকচালক পিন্টু ও ইকলাছ। রায়পুর বাজারে একটি বিল্ডিংয়ের কাজ করছিলেন রাজমিস্ত্রী ইমরান ও কয়েকজন রড মিস্ত্রী। তারা জানান, সামান্য রোদে লোহার রোড অতিরিক্ত গরম হয়ে ওঠে। হাতে ফোসকা পড়ে যায়। তারপরেও পরিবার-পরিজনের কথা ভেবে কাজে আসতে হচ্ছে।
শহরের ব্যস্ততম শহীদ রেজাউল চত্বরে সকাল ১০টার দিকে জনসমাগম ছিল বেশ। অথচ দুপুর দুইটার দিকে জনমানবহীন পরিবেশ চোখে পড়ে। যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা বলেন, দিনের বেশির ভাগ সময় শহরে যাত্রী পরিবহন করেন। বেশির ভাগ দিন সন্ধ্যার পর বাড়িতে ফেরেন। তবে আজকের তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় অস্বস্তিকর গরমের কারণে বিকেলেই বামন্দী হয়ে বাড়ির পথে রওনা দিয়েছেন।
গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা সুপ্রভা রানী জানান, তাপপ্রবাহ চলাকালে তাপমাত্রা এড়িয়ে চলতে হবে। খাড়া দুপুরে কাজ না করে সকাল-দুপুরে কাজ করতে হবে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হওয়াই ভালো। পানিসহ বেশি বেশি তরল খাবার খাওয়ার পরামর্শ ছাড়াও বৃদ্ধ, শিশু এবং জটিল-কঠিন রোগে আক্রান্তদের প্রতি বিশেষ নজরদারি রাখতে হবে। ডায়রিয়ার প্রকোপ শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন করা সম্ভব বলে কি আপনি মনে করেন?