ঠাকুরগাঁওয়ে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীকে শ্লীলতাহানি ও ধর্ষণের অভিযোগে গ্রেপ্তার হওয়া শিক্ষক মোজাম্মেল হক মানিককে আদালতে তোলার সময় উত্তেজিত ছাত্র-জনতার গণপিটুনির শিকার হয়েছেন। রোববার (৯ মার্চ) সকালে পুলিশের পাহারায় আদালতে হাজির করার সময় বিক্ষুব্ধ জনতা অভিযুক্ত শিক্ষকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। মুহূর্তের মধ্যে জনরোষ চরম আকার ধারণ করে, শিক্ষার্থীরা ও স্থানীয়রা চিৎকার করে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানায়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেলে পুলিশ দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক মানিককে পুনরায় কোর্ট হাজতে পাঠায়।
এ ঘটনার পর থেকেই শহরজুড়ে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে শহরের চৌরাস্তা মোড়ে এক বিশাল প্রতিবাদ সভা অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী, অভিভাবক, মানবাধিকারকর্মী এবং সাধারণ জনতা অংশ নেন। বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, শিক্ষক নামের কলঙ্ক মোজাম্মেল হকের মতো বিকৃত মানসিকতার লোকদের সমাজে স্থান নেই। তারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে তার সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকরের দাবি জানান।
প্রতিবাদ সভা শেষে হাজারো মানুষ একটি বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে জেলা জজ কোর্ট চত্বরে গিয়ে অবস্থান নেয়। সেখানে বিক্ষোভকারীরা ধর্ষকের ফাঁসির দাবিতে একাধিক শ্লোগান দেয় এবং প্রশাসনের প্রতি দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানান। শিক্ষার্থীরা একসঙ্গে চিৎকার করে বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হবে নিরাপদ, ধর্ষকদের জন্য হবে ফাঁসি!”
উল্লেখ্য, এই চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে গতকাল শনিবার সদর উপজেলার আউলিয়াপুর ইউনিয়নের মাদারগঞ্জ কচুবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। বিদ্যালয় বন্ধ থাকলেও সহকারী শিক্ষক মোজাম্মেল হক মানিক তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট পড়াতেন। প্রতিদিনের মতোই এক শিক্ষার্থী তার কাছে পড়তে যায়। কিন্তু সুযোগ বুঝে শিক্ষক নামধারী এই ব্যক্তি ভয় দেখিয়ে শিশুটির সঙ্গে অমানবিক আচরণ করে এবং ধর্ষণ করে বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীর পরিবারের অভিযোগ, ধর্ষণের পর মানিক শিক্ষার্থীকে চুপ থাকার জন্য ভয় দেখায় এবং হুমকি দেয়। কিন্তু শিশুটি প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়লে পরিবার ঘটনাটি জানতে পারে এবং তাকে হাসপাতালে ভর্তি করে। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শিশুটি পুরো ঘটনা তার পরিবারের কাছে খুলে বলে। পরে ক্ষুব্ধ অভিভাবক ও স্থানীয়রা একত্রিত হয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন।
বিকেলে পুলিশের একটি দল বিশেষ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করে। তবে জনরোষ এতটাই তীব্র ছিল যে, পুলিশ তাকে আদালতে নেওয়ার সময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে হিমশিম খায়। স্থানীয়রা বলছেন, এ ধরনের অপরাধীরা বারবার ছাড় পেয়ে যায়, তাই এবার তারা চাইছেন দ্রুততম সময়ের মধ্যে ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করা হোক।
এদিকে, ঘটনার পর স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করা হচ্ছে এবং দোষীর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। জেলা পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, “শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এ ধরনের জঘন্য অপরাধ কখনোই মেনে নেওয়া হবে না। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং তাকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে বিচারের আওতায় আনা হবে।”
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এমন ঘটনা শুধু ঠাকুরগাঁও নয়, সারা দেশেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা ও শিশুদের সুরক্ষার জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ ধরনের অপরাধের দ্রুত বিচার নিশ্চিত না হলে, ভবিষ্যতে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তাই অভিভাবক, সাধারণ মানুষ ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো চাইছে, ধর্ষণের বিরুদ্ধে কঠোরতম শাস্তি নিশ্চিত করা হোক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে নির্যাতনবিরোধী কার্যক্রম আরও জোরদার করা হোক।
এই ন্যক্কারজনক ঘটনার পর ঠাকুরগাঁওয়ের সাধারণ মানুষ, শিক্ষার্থী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো রাস্তায় নেমে এসেছে এবং এই অপরাধের উপযুক্ত বিচার না হলে তারা আরও কঠোর কর্মসূচির হুঁশিয়ারি দিয়েছে। প্রশাসন ও সরকারের প্রতি তাদের দাবি একটাই— ধর্ষকের সর্বোচ্চ শাস্তি হোক এবং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো হোক নিরাপদ আশ্রয়, যেখানে কোনো শিক্ষার্থী ভয়ভীতির মধ্যে থাকবে না।