নেত্রকোনা প্রতিনিধি:
নেত্রকোনার খালিয়াজুরী উপজেলার পলো বাইছকারি ও গ্রামবাসীর মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে উভয়পক্ষে পাঁচ শতাধিক লোক আহত হয়েছে। শনিবার সকালে উপজেলার রসুলপুর ও জগন্নাথপুর এলাকায় এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। সংঘর্ষের সময় আত্মরক্ষার জন্য অনেক পলো বাইছকারি ধনু নদীতে ঝাঁপ দেয়। এর মধ্যে বেশ কিছু লোক নিখোঁজ রয়েছে বলে জানা যায়। পলো বাইছকারি লোকজনের বহনকারী শতাধিক গাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করা হয়েছে। এর মধ্যে ব্যাটারী চালিত ইজিবাইক, সিএনজি, মোটরসাইকেল, পিকআপ ও লেগুনা রয়েছে। এর মধ্যে কিছু যানবাহন আগুন দিয়ে পুড়ি দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
পলো বাইছকারীদের সাথে উপজেলার রসুলপুর ও জগন্নাথপুর গ্রামের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষের বিষয়টি নিশ্চিত করে খালিয়াজুরী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি মো মকবুল হোসেন জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ৫১ জনের মতো পলো বাইছকারীকে আটক করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, জেলার সদর, বারহাট্টা, মদন, মোহনগঞ্জ, কেন্দুয়া, আটপাড়া ও খালিয়াজুর উপজেলা ছাড়াও ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল কিশোরগঞ্জের তারাকান্দা ও আটারবাড়ি এলাকার লোকজন প্রতিবছরই সরকারি জলমহালে পলো বাইছ করে মাছ ধরে। এবছরও গত ১৫-২০ দিন ধরে এসব অঞ্চলের লোকজন পলো নিয়ে বিভিন্ন জলমহালে মাছ ধরে আসছে। এরই ধারাবাহিকতায় আজ শনিবার সকালে খালিয়াজুরী উপজেলার মাছ ধরতে যায়। ইজারাদার তাদের নিজ এলাকা জগন্নাথপুর ও রসুলপুর গ্রামের লোকজনদের নিয়ে প্রতিহত করার প্রস্তুতি নেয়। সকালে পলো বাইছকারি লোকজন আসতে দেখে ওই দুই গ্রামের মসজিদের মাইকে ঘোষণা দিয়ে তাদেরকে প্রতিহত করতে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে। এ সময় ওই এলাকায় রণক্ষেত্র পরিণত হয়। এর সংঘর্ষে উভয় পক্ষের ৫ শতাধিক লোক আহত হয়েছে। আত্মরক্ষার জন্য অনেকের নদীতে ঝাপ দিয়ে আর উঠে আসতে পারে নি। এছাড়াও বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পলো বাইছকারী লোকজন যেসব যানবাহন নিয়ে এসেছেন তা ভাঙচুর ও আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়ার হয়েছে। এর মধ্যে পিকআপ, লেগুনা, ব্যাটারি চালিত ইজিবাইক, মোটরসাইকেল ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে মদন সেনাবাহিনী ক্যাম্পের খালিয়াজুরির দায়িত্বে থাকা সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার রেজওয়ান এর নেতৃত্বে সেনাবাহিনী এবং খালিয়াজুরী থানা পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিস ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এ সময় পলো বাইছকারীদের মধ্যে থেকে ৬০ জনের মতো আটক করেছে পুলিশ।

কিশোরগঞ্জের তারাকান্দা ও আঠারবাড়ি উপজেলার পোলো বাইশ করতে আসা অনেকেই নাম প্রকাশ না করা শর্তে বলেন, আমরা ছোটকাল থেকেই দেখে আসছি পলো নিয়ে এসব এলাকায় ফাল্গুন চৈত্র মাসে মাছ ধরতে আসে। এই ধারা এখনও অব্যাহত আছে। এই সুবাদে আমরা মাছ ধরতে আসি। বিলে নামার আগেই জগন্নাথপুর ও রসুলপুর গ্রামের লোকজন আমাদের উপর অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা করে। হামলায় আমাদের অন্তত ৭ থেকে ৮শ লোক আহত হয়েছে।
ময়মনসিংহের নান্দাইল উপজেলার নাম প্রকাশন অনিচ্ছুক কয়েকজন বলেন, জগনাথপুর এবং রসুলপুরের মানুষ আগে থেকেই আমাদেরকে উপর হামলা করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছিল। পুলিশ ও সেনাবাহিনী যদি না আসতো তাহলে কয়েকশ মানুষকে মেরে ফেলতে তারা। তবে আত্মরক্ষা করার জন্য অনেকেই ধনু নদীতে চাপ দিয়েছিল এদের মধ্যে বেশ কিছু লোককে আমরা খুঁজে পাচ্ছি না।
রসুলপুর গ্রামের অধীর চন্দ্র দাস আবির জুলহাস পিপুল জুনায়েদ রুবেল সহ অনেকেই বলেন, নৌকাতে তাদেরকে রসুলপুরের ধনু নদী পার না করার কারণে আমাদের গ্রামে তারা আক্রমণ করে। বাজারে দোকানে লুটপাট শুরু করে। পরে আমাদের গ্রামবাসী মাইকিং করে দেশীয় সশস্ত্র নিয়ে প্রতিহত করি। পরে উৎসুক জনতা পলো বাইছকারীদের বহনকারী যানবাহন ভাঙচুর ও আগুন দেয়।
তারা আরো বলেন, কোটি কোটি টাকা খরচ করে জলমহাল ইজারা নেয়। আর এরকম দুষ্কৃতিকারীরা পলো নিয়ে এসে লক্ষ লক্ষ টাকার মাছ ধরে নিয়ে যায়। এতে প্রতিবছরই জলমহালের ইজারাদাররা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমরা চাই যাতে এরকমভাবে পলো বাইছকারিরা যাতে এরকম না করতে পারে এ ব্যাপারে প্রশাসন উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করুক।
মদন সেনাবাহিনী ক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার খালিয়াজুরী উপজেলার দায়িত্বে থাকা রেজাউল বলেন, সকালে পলো বাইছকারী খালিয়াজুরী এলাকায় জলমহলে মাছ ধরতে যাওয়ার খবর পাই। পরে ঘটনাস্থলে আমরা যাওয়ার পথে সবাইকে সংঘর্ষ না যাওয়াতে অনুরোধ করি। এ সময় তেমন কিছু ঘটেনি। ঘটনাস্থলে গিয়ে পুলিশকে সাথে নিয়ে দীর্ঘ সময় কাজ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে বেশ কিছু লোককে আটক করা হয়েছে।
নেত্রকোনা পুলিশ সুপার মির্জা সায়েম মাহমুদ বলেন, খালিয়াজুরীতে পলো নিয়ে অবৈধভাবে সরকারী জলমহালে মাছ ধরতে গিয়েছিল কয়েক হাজার লোক। পরে গ্রামবাসীর সাথে সংঘর্ষে হয়। পুলিশ, সেনাবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস যৌথ অভিযান পরিচালনা করে অর্ধশতাধিক লোক আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।