সাব্বির হোসেন, লালমনিরহাট প্রতিনিধিঃ
লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলায় তিস্তা নদী থেকে অবৈধ বালু উত্তোলনের ভিডিও ধারণ করতে গিয়ে সাংবাদিক মাহফুজুল ইসলাম বকুলকে হেনস্তা ও মোটরসাইকেল-ক্যামেরা ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) সদস্য আবু তালেব আবু ও তার সঙ্গীদের বিরুদ্ধে।
এ ঘটনায় শুক্রবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় আদিতমারী থানায় ৯ জনের নামে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন চ্যানেল২৪ এর প্রতিনিধি বকুল।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের চন্ডিমারী গ্রামে তিস্তা নদী থেকে রাতের অন্ধকারে ইউপি সদস্য আবু তালেব আবু ও তার সহযোগীরা ট্রাকে করে বালু উত্তোলন করে অবৈধভাবে বিক্রি করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগের সূত্র ধরে বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে ঘটনাস্থলে পৌঁছান সাংবাদিক বকুল। পেশাগত দায়িত্ব পালনরত অবস্থায় তিনি বালু উত্তোলনের ভিডিও ধারণ শুরু করলে আবু তালেব ও তার অনুসারীরা তাঁকে গালমন্দ করে ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয় এবং মারধরের চেষ্টা করে।
এ সময় বকুলের মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। স্থানীয়রা তাঁকে বাঁচাতে এগিয়ে এলে সংঘর্ষে তিনজন আহত হন। আহতরা বর্তমানে আদিতমারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন।
পরবর্তীতে আত্মরক্ষার্থে সরে দাঁড়ালে অভিযুক্তরা বকুলের মোটরসাইকেল, ক্যামেরা ও ব্যাগে থাকা সরঞ্জাম ছিনিয়ে ট্রাকে করে সরিয়ে ফেলে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। স্থানীয়দের সহায়তায় বাড়ি ফিরে প্রাথমিক চিকিৎসা নেন বকুল।
ইউপি সদস্য আবু তালেব আবু ঘটনা অস্বীকার করে বলেন, “নদী ভাঙনের পর আমার জমিতে চর জেগেছে। সেখানকার বালু উত্তোলন করছি, যা সম্পূর্ণ বৈধ।
মধ্যরাতে সাংবাদিকের আসার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাঁর ক্যামেরা বা গাড়ি আমি স্পর্শ করিনি। ট্রাক চালকদের সঙ্গে তাঁর বাকবিতণ্ডা হয়েছে বলে শুনেছি।”
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে আবু তালেব ও তার দল তিস্তা নদী থেকে বালু উত্তোলন করে আসছেন। রাতের আঁধারে এই কর্মকাণ্ড চালানোর অভিযোগে স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে বারবার অভিযোগ জানালেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
আদিতমারী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী আকবর বলেন, “সাংবাদিকের প্রতি এমন আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। অভিযোগ পেয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
মাহফুজুল ইসলাম বকুল বলেন, “জনগণের তথ্য জানার অধিকার রক্ষায় আমি দায়িত্ব পালন করছিলাম। বালু অবৈধভাবে উত্তোলনের প্রমাণ ভিডিও করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছি। আশা করি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে।”
স্থানীয় পরিবেশ কর্মীদের মতে, তিস্তা নদীতে অবৈধ বালু উত্তোলনের ফলে নদীর ভাঙন তীব্র হয়েছে, যা কৃষি ও পরিবেশের জন্য হুমকিস্বরূপ। প্রশাসনের কঠোর নজরদারি ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছে তারা।
এই ঘটনায় স্থানীয় সাংবাদিক সমিতি ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো নিন্দা জানিয়ে তাৎক্ষণিক তদন্তের দাবি তুলেছে।