রাজধানীর উত্তরা এলাকায় ছিনতাইয়ের অভিযোগে দুই ব্যক্তিকে আটক করে স্থানীয় জনতা তাদের উপর নির্মম গণপিটুনি চালিয়েছে। এরপর দড়ি দিয়ে বেঁধে ফুটওভার ব্রিজে ঝুলিয়ে রাখা হয়।
মঙ্গলবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) রাত ৯টার দিকে উত্তরার বিএনএস সেন্টারের সামনে এ ভয়াবহ ঘটনা ঘটে। উত্তরা পূর্ব থানার ওসি শামীম আহমেদ জানিয়েছেন, খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে গুরুতর আহত দুই ব্যক্তিকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাদের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে দেখা গেছে, স্থানীয় জনতা উত্তেজিত হয়ে ওই দুই ব্যক্তিকে মারধর করছে। অনেকে তাদের উপর লাঠি ও ঘুষি দিয়ে আক্রমণ করছে, আবার কেউ কেউ পুরো ঘটনার ভিডিও ধারণ করছে। ঘটনাস্থলে উপস্থিত পুলিশ সদস্যদের দেখা গেলেও তারা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুরোপুরি সক্ষম হয়নি।
রাজধানীসহ সারাদেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতির মধ্যে এই ঘটনা ঘটেছে। সাম্প্রতিক সময়ে চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, সন্ত্রাসী হামলা ও গুমের ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় সাধারণ মানুষ আতঙ্কে রয়েছে। বিভিন্ন এলাকায় রাত হলেই ছিনতাইকারীদের দৌরাত্ম্য বাড়ছে, যার ফলে জনতা আইন নিজের হাতে তুলে নিচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অনেকেই কারাগারে থাকায় এবং প্রশাসনিক কাঠামো এখনও পুরোপুরি পুনর্গঠিত না হওয়ায় অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির অনেক সদস্যই সাম্প্রতিক রাজনৈতিক অস্থিরতার পর থেকে আতঙ্কিত এবং স্বাভাবিক কাজকর্মে ফিরতে পারছে না।
এমন পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নতুন কৌশল গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা। অন্তর্বর্তী সরকার অপরাধ দমনে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করলেও বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা যাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সংকট এবং অপরাধীদের দৌরাত্ম্য একসঙ্গে মোকাবিলা করতে না পারলে, এ ধরনের গণপিটুনির ঘটনা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
উল্লেখ্য, সাম্প্রতিক সময়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ছিনতাইকারীদের বিরুদ্ধে উত্তেজিত জনতার প্রতিক্রিয়া বেড়েই চলেছে। কিছুদিন আগেই মিরপুর ও গুলিস্তানে একই ধরনের ঘটনা ঘটেছিল, যেখানে ছিনতাইকারীদের ধরে বেধড়ক পিটিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছিল।
অপরাধীদের বিরুদ্ধে জনরোষ বৃদ্ধি পাওয়ায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, “আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্ব জনগণের নয়, এটি রাষ্ট্রের কাজ। কিন্তু যখন জনগণ নিজের হাতে আইন তুলে নেয়, তখন বোঝা যায় যে তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। আমরা এই পরিস্থিতি দ্রুত নিয়ন্ত্রণে আনতে চাই।”
সরকারি পদক্ষেপ বাস্তবায়িত না হলে জনতার রোষ আরও তীব্র হতে পারে এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন, স্থানীয় সরকার এবং নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে, যাতে জনগণ আইনের প্রতি আস্থা রাখতে পারে এবং নিজেদের নিরাপদ মনে করতে পারে।