কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিএনপি-জামায়াতপন্থী সকল প্রার্থীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে। সোমবার রাতে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও আইনজীবী সমিতির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট কাজী মফিজুল ইসলাম এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এবারের নির্বাচনে ১৫টি পদের জন্য কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী ছিল না। মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে সকল প্রার্থীর মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়। সোমবার ছিল চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের নির্ধারিত সময়। যেহেতু প্রতিটি পদে একক প্রার্থী ছিলেন, তাই তাদের সবাইকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিজয়ীদের মধ্যে রয়েছেন সভাপতি পদে মো. শহিদুল্লাহ, সহ-সভাপতি পদে মো. নুরুল ইসলাম ও মো. এরশাদুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক খন্দকার মিজানুর রহমান, সহ-সাধারণ সম্পাদক নজরুল ইসলাম মানিক, ট্রেজারার মো. মুজিবুল ইসলাম, লাইব্রেরি সম্পাদক মোশাররফ হোসেন পাখি, এনরোলমেন্ট সম্পাদক মো. শফিউল্লাহ, রিক্রিয়েশন সম্পাদক মো. জহিরুল ইসলাম, আইটি সম্পাদক মো. সাইফুল ইসলাম এবং সদস্য পদে মো. ওবায়েদ উল্লাহ সরকার, মো. শরিফুল ইসলাম, মো. কামরুল হাসান সুমন, মু. সলিমুল্লাহ খান ও মো. মাসুদ।
নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, ভোট গ্রহণ হওয়ার কথা ছিল ৬ মার্চ। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা নির্বাচনে অংশ নেননি। বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা অভিযোগ তুলেছেন যে, তাদের নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হয়নি।
সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট মোস্তাফিজুর রহমান লিটন বলেন, “গত বছরের ৩ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় মিছিলে হামলার অভিযোগে আমাকে এবং সেক্রেটারিসহ ৩২ জন আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীকে আসামি করা হয়েছে। ফলে আমরা আদালত চত্বরে যেতে পারিনি। আমাদের নিরাপত্তা নিয়েও সংশয় ছিল। তাই কেউ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করতে পারেনি।”
তবে প্রধান নির্বাচন কমিশনার অ্যাডভোকেট কাজী মফিজুল ইসলাম এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “যারা নির্ধারিত ফি জমা দিয়েছেন এবং বৈধ ভোটার ছিলেন, তারাই মনোনয়ন ফরম নিয়েছেন। আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা আদালতে আসতে পারতেন এবং মনোনয়ন নিতে পারতেন।”
এই নির্বাচনের ফলে কুমিল্লা জেলা আইনজীবী সমিতিতে বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীদের নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হলো। তবে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, রাজনৈতিক বিভাজন এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই নির্বাচনী ফলাফল আইনজীবী সমিতির ভবিষ্যৎ কার্যক্রমে দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে। বিরোধী পক্ষের অভিযোগ অনুযায়ী, বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আইনি জটিলতার কারণে আওয়ামী লীগ সমর্থিত আইনজীবীরা কার্যত নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাননি, যা পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে একপাক্ষিক করে তুলেছে।
দেশের অন্যান্য জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে একই রকম পরিস্থিতি দেখা যাবে কি না, তা এখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবীরা কি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন, নাকি আইনি জটিলতা তাদের আরও পিছিয়ে দেবে? এসব প্রশ্নের উত্তর সময়ের সঙ্গে স্পষ্ট হবে।