নূরুল আলম কামাল, নেত্রকোনা :
বিএনপি’র বহুল আলোচিত নেতা সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর বলেছেন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব আমাদের সবচেয়ে বড় সম্পদ। আমরা কোনো বিদেশি শক্তির কাছে মাথা নত করবো না। আমাদের লড়াই শুধু স্বৈরাচারী সরকারের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের লড়াই দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার লড়াই। যারা বিদেশি শক্তির দালালি করে, দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয়, তাদের বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান স্পষ্ট। দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে এদেশের জনগণ। কোনো বিদেশি গোষ্ঠী নয়।
রবিবার বিকেলে নেত্রকোনার ঐতিহাসিক মুক্তারপাড়া মাঠে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক ডা. আনোয়ারুল হকের সভাপতিত্বে ও সদস্য সচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালীর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথি বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, আমি আপনাদের সামনে দাঁড়িয়ে আবেগাপ্লুত। দীর্ঘ ১৭ বছর কারাগারে কাটিয়ে আপনাদের মাঝে ফিরে এসেছি। আপনাদের ভালোবাসা, দোয়া এবং সমর্থন আমাকে এই দীর্ঘ পথ চলতে শক্তি যুগিয়েছে। আমি আপনাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আওয়ামী লীগ আমাকে মিথ্যা মামলা, ফাঁসির দণ্ড ও অকথ্য নির্যাতন করে দমিয়ে দিতে চেয়েছিল। তবুও আমি আপোষ কিংবা মাথানত করিনি। আমি সত্যের পথে ছিলাম, আছি এবং থাকবো। আওয়ামী লীগ আমাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিতে চেয়েছিলো। আল্লাহর অশেষ রহমত ও আপনাদের ভালোবাসা আমাকে আপনাদের সামনে নিয়ে এসেছে।
বাবর আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনা সরকার একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে বিচার বিভাগকে ব্যবহার করে আমাকে সাজা দেয়। আমার পরিবারকে নিপীড়ন, ভয়-ভীতি ও নানাভাবে হয়রানি করে। শুধু আমি নই, আমার দলের নেতাকর্মীরাও এই স্বৈরাচারী সরকারের নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী গুম ও খুন করা হয়েছে। জেল জুলুম ও নির্যাতন করা হয়েছে। তবুও আদর্শ থেকে সরাতে পারেনি।
পতিত সরকারের অত্যাচার নিপীড়নেও আমি মাথা নত করিনি, আপোষও করিনি। ফাঁসির মঞ্চে দাঁড়িয়েও সত্য কথা বলবো। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য জীবন উৎসর্গও করতে পারি। দেশ আমাদের, এদেশের মালিক জনগণ। তাই জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদী চরিত্র কারও অজানা নয়। তারা একদলীয় শাসনব্যবস্থা কায়েম করেছে। বিরোধী দলকে দমন করতে বিচার বিভাগ, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সব প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করেছে। গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করেছে। জনগণের কন্ঠ রোধ করেছে। মানুষের ভোটাধিকার কেড়ে নিয়ে দেশকে স্বৈরাতন্ত্রের কারাগারে পরিণত করে।
বাংলাদেশ এক গভীর সংকটের মুখ থেকে ফিরে এসেছে। দিল্লির দাসত্ব আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। দেশের সম্পদ লুট করে বিদেশিদের হাতে তুলে দেয় এবং সার্বভৌমত্বকে পদদলিত করে আওয়ামী লীগ। দেশের জনগণ আধিপত্যবাদ মেনে নেয়নি। আমরা কোনো পরাশক্তির গোলাম নই। আমরা স্বাধীন বাংলাদেশ গড়তে চাই। যেখানে জনগণ হবে সর্বক্ষমতার উৎস, যেখানে জাতীয় স্বার্থই হবে সবার আগে।
লুৎফুজ্জামান বাবর বলেন, আপোষহীন নেত্রী, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া আজও গণতন্ত্রের প্রতীক হয়ে আছেন। তিনি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, শত নির্যাতন সহ্য করে গণতন্ত্র রক্ষার লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। হাসিনা সরকার তাকে মিথ্যা মামলায় আটকে রেখেছে। কিন্তু তিনি এখনো আপোষ করেননি। তাঁর নেতৃত্বেই আমরা নতুন বাংলাদেশ দেখবো। ইনশাআল্লাহ!
দেশনায়ক তারেক রহমান প্রবাসে থেকেও দলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। দেশের মানুষের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁর দূরদর্শী নেতৃত্বে বাংলাদেশ উচ্চ শিখরে পৌছবে। আজকের তরুণদের সামনে তারেক রহমানই একমাত্র আশার আলো। তাঁর নেতৃত্ব, দল, সংগ্রাম সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে।
আমার সবচেয়ে বড় অপরাধ দিল্লীর আধিপত্যবাদকে ‘না’ বলেছিলাম। স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমার অবস্থান ছিলো সর্বদা দেশের পক্ষে। দিল্লীর আধিপত্যবাদের বিপক্ষে। ভারতীয় আশীর্বাদপুষ্ট আওয়ামী সরকার চেয়েছিলো আমাকে মিথ্যা মামলায় দুনিয়া থেকে বিদায় করে দিতে।
জুলাই-আগষ্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ পতন হয়েছে। ছাত্র, রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী, শ্রমিক ও সর্বস্তরের জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে ফ্যাসিজমের প্রতীক হাসিনার পতন হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সমন্বয়ক ও বিপ্লবী ছাত্র-জনতার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। যাদের নেতৃত্বে আমরা নতুন বাংলাদেশ পেয়েছি। ২৪ এর ছাত্র-জনতার সফল গণঅভ্যুত্থানের পর আমি মিথ্যা মামলা থেকে মুক্তি পেয়েছি। যদি প্রয়োজন হয়, আমি আবারও যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করব। তবুও অন্যায়ের কাছে মাথা নত করবো না।