সোহেল রানা, সিংগাইর প্রতিনিধিঃ
মানিকগঞ্জের সিংগাইরে তিন ফসলি জমি থেকে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। অবৈধ মুনাফার জন্য এসব কাজে সহযোগিতা করছেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালী লোকজন, রাতে ফসলি জমির মাটি কাটা ও জমির মালিকদের বাড়ি-ঘরে মাটি ব্যবসায়ীদের হামলার প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী কৃষক ও স্থানীয় বাসিন্দারা।
শুক্রবার (৭ফেব্রুয়ারী) উপজেলার চান্দহর ইউনিয়নের চালিতাপাড়া আব্বাস মার্কেটের সামনের সড়কে বিকেল ৪ টার দিকে এ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করা হয়। এতে চালিতাপাড়া, রিফায়েতপুর, বার্তা,মাধবপুর ও ফতেপুর গ্রামের তিন শতাধিক লোক অংশ নেয়।
প্রথমে তারা হামলাকারীদের বিরুদ্ধে স্লোগান দিয়ে মানববন্ধন করেন। পরে তারা সংবাদ সম্মেলনে প্রশাসনের কাছে মাটিকাটা বন্ধের দাবিসহ হামলাকারীদের শাস্তির দাবি করেন। সংবাদ সম্মেলনে মাটিকাটা প্রতিরোধ কমিটির সমন্বয়ক ও ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের আহ্বায়ক মো: তারিকুর রহমান আলাল স্থানীয় কৃষকদের পক্ষ থেকে ফসলি জমির মাটি ব্যবসায়ীদের অত্যাচারের কথা তুলে ধরেন।
আলাল আরো বলেন, মানিকগঞ্জের সাত উপজেলার প্রায় সব উপজেলায় অর্ধ শতাধিক স্পটে এক্সকাভেটর ও শ্রমিক দিয়ে আবাদি জমির উপরিভাগের মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন ইটভাটায়। এভাবে জমির মাটি কাটার ফলে আবাদি জমির উৎপাদন হ্রাস পাচ্ছে। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে মাটির জৈব গুণাগুণ।
পুকুর, জলাশয়, ডোবায় পরিণতসহ নিচু হয়ে যাচ্ছে কৃষিজমি,ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ। সেই মাটি কাটার প্রভাব পড়েছে আমাদের চান্দহর ইউনিয়নে বিশেষ করে চক চালিতা পাড়া গ্রামের চকে এখানে রাতে আধারে মাটি কাটার উৎসব চলছে, তিনি জড়িতদের আইনের আওতাই এনে এর বিচার ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপে মাটি কাটা বন্ধের জোর দাবি জানান।
ভুক্তভোগী জানু খা বলেন, আমার ৩ বিঘা জমির শস্য তারা নষ্ট করে ফেলেছে গাড়ী নেওয়ার জন্য, বিভিন্ন মানুষের কাছে বিচার চাইছি বলে বৃহস্পতিবার রাতের আধারে আমার বাড়ীতে আমাকে মারার জন্য সন্ত্রাসী পাঠিয়ে হামলা চালায় পরে গ্রামের মানুষ টের পেয়ে মসজিদের মাইকে মাইকিং করার কারনে তারা পালিয়ে যায় এবং আমিসহ আমার পরিবার রক্ষা পাই,আমি এই মাটি খেকোদের বিচার চাই।
হামলার শিকার শাহজান বলেন, মাটি খেকোর দল রাতের আধারে আমার বাড়ীতে সন্ত্রাসী পাঠিয়ে আমার বসত বাড়ির টিনের বেড়ায় এলোপাথাড়ি লাঠি দিয়ে আঘাত করে ভাংচুর করে এবং তারা আমার নাম ধরে ডাকতে থাকে আর আমাকে মারার হুমকি দিতে থাকে,পড়ে আমার ডাক চিতকারে এলাকার মানুষ এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায়।
জামির্ত্তা ইউনিয়নের মাটিকাটা প্রতিরোধ কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ আবু সায়েম বলেন,আমার জামির্তা ইউনিয়নে মাটি কাটা বন্ধের জন্য যেমন প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে ঠিক তেমনি চান্দহর ইউনিয়নেও যেন মাটি কাটা বন্ধ হয় তার জন্য আপনারা আমাকে যে কোন সময় ডাকলে আমি আপনাদের পাশে থাকবো ইনশাআল্লাহ এবং মাটি কাটা বন্ধের জন্য প্রজ্ঞাপন জারি করার জন্য সাহায্য করবো। আপনারা সকলে ঐক্যবদ্ধ থাকেন ইনশাআল্লাহ খুব অচিরেই মাটি খেকোদের আমরা প্রতিহত করতে পারবো।
সচেতন মহলের ভাষ্য, এভাবে জমির মাটি কাটা অব্যাহত থাকলে একসময় কৃষিতে বিপর্যয় দেখা দেবে। কমে যাবে আবাদি জমির পরিমাণ।
পরিবেশ আইন অনুযায়ী, কৃষিজমির মাটি কাটা দণ্ডনীয় অপরাধ। জানা যায়, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ১৯৯৫ (সংশোধিত ২০১২-এর ৬ ধারা) অনুযায়ী প্রাকৃতিকভাবে
সৃষ্ট টিলা ও পাহাড় কাটা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
অন্যদিকে ১৯৮৯ সালের ইট পোড়ানো নিয়ন্ত্রণ আইন (সংশোধিত ২০০১) অনুযায়ী,
কৃষিজমির টপ সয়েল বা উপরিভাগের মাটি কেটে শ্রেণি পরিবর্তন করাও সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ রয়েছে।
দুই আইনে শাস্তির বিধান একই রকম। এসব কাজে জড়িত ব্যক্তিদের দুই লাখ টাকা জরিমানা ও দুই বছরের কারাদণ্ড দেওয়ার বিধান রাখা হয়েছে। একই অপরাধ
দ্বিতীয়বার করলে দায়ী ব্যক্তির ১০ লাখ টাকা জরিমানা ও ১০ বছরের কারাদণ্ড হবে। এক্ষেত্রে এ কাজের সঙ্গে জড়িত জমি ও ইটভাটার মালিক উভয়ের জন্যই সমান শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে।
এ সময় স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে প্রতিবাদ জানিয়ে বক্তব্য রাখেন- আব্বাস মার্কেটের মালিক আব্বাস উদ্দিন স্থানীয় ব্যাবসায়ী মো: দেলোয়ার হোসেন,,চান্দহর ইউনিয়ন সেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ন আহবায়ক মো: সুজন প্রামানিক এছাড়াও স্থানীয়দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন – জমির মালিক শাহজাহান, মোঃ আশরাফ, শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।