গাজায় চলমান যুদ্ধ এবং হাজার হাজার রিজার্ভ সৈন্যকে ফের ডাকার প্রেক্ষাপটে ইসরাইলি সেনাবাহিনী ভয়াবহ মনোবল সংকটে ভুগছে। বাড়ছে আত্মহত্যা, আদেশ অমান্য এবং সেনাবাহিনী ত্যাগের প্রবণতা। দেশটির গোয়েন্দা ও সামরিক খাতের ভেতরে ব্যাপক অসন্তোষ তৈরি হয়েছে, যা এখন সরকারের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
পার্সটুডে ও ইরনার বরাতে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হওয়ার ফলে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মধ্যে মানসিক চাপ, অবসাদ ও বিদ্রোহের প্রবণতা বহুগুণে বেড়ে গেছে।
কমছে সেনাবাহিনীতে থাকার ইচ্ছা
ইসরাইলি সেনাবাহিনীর মানবসম্পদ বিভাগ পরিচালিত এক জরিপ অনুযায়ী, বর্তমানে মাত্র ৪২ শতাংশ সেনা অফিসার সামরিক বাহিনীতে থাকতে ইচ্ছুক—যেখানে যুদ্ধ শুরুর আগে এই সংখ্যা ছিল ৪৯ শতাংশ। হিব্রু সংবাদমাধ্যম ইয়াদিওথ আহরনোথ জানিয়েছে, সেনা সদস্যদের আত্মহত্যা ও চাকরি ত্যাগের ঘটনা বেড়েছে।
রিজার্ভ সেনাদের মধ্যে বিদ্রোহ
ইসরাইল যখন যুদ্ধবিরতি ভেঙে আবার গাজায় অভিযান শুরু করে, তখন রিজার্ভ সৈন্যদের একটি বড় অংশ আদেশ অমান্য করতে শুরু করে। হিব্রু সূত্রগুলো জানায়, “নাহাল” ব্রিগেডের ৩০ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ৬ জন গাজায় যেতে রাজি হন। বহু সৈন্য সরাসরি জানিয়ে দেন, যুদ্ধের জন্য ডাকলেও তারা অংশ নেবেন না।
মোসাদেও অসন্তোষ, নেতানিয়াহুর কড়া ভাষা
সেনাবাহিনীর পাশাপাশি ইসরাইলের গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদেও তীব্র প্রতিবাদ দেখা যাচ্ছে। সংস্থাটির তিনজন সাবেক প্রধানসহ ২৫০ জন কর্মকর্তা গাজা যুদ্ধ থামিয়ে বন্দি বিনিময়ের আহ্বানে স্বাক্ষর করেছেন।
তবে ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু এই কর্মকর্তাদের ‘আগাছা’ বলে আখ্যা দিয়ে তাদের বহিষ্কারের হুমকি দিয়েছেন।
যুদ্ধের মানসিক পরিণতি
দীর্ঘ যুদ্ধের ফলে হাজার হাজার সেনা মানসিক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে জানিয়েছে হিব্রু সংবাদমাধ্যমগুলো। বিষণ্ণতা, ট্রমা ও মানসিক স্থবিরতা সেনাদের যুদ্ধক্ষমতা মারাত্মকভাবে ব্যাহত করছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন,
“গাজা যুদ্ধ কেবল ইসরাইলি সামরিক লক্ষ্য পূরণে ব্যর্থ হয়নি, বরং ইসরাইলি বাহিনীর কাঠামোগত দুর্বলতা ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের কৌশলগত ব্যর্থতাও নগ্নভাবে প্রকাশ করে দিয়েছে।”
যুদ্ধবিরতি ও তার ভঙ্গ
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, ইসরাইল হামাসকে নির্মূল ও ইসরাইলি বন্দিদের মুক্তি নিশ্চিত করার লক্ষ্যে গাজায় যুদ্ধ শুরু করে। দীর্ঘ সময় পর, ২০২৫ সালের ১৯ জানুয়ারি, হামাসের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছায় তারা এবং যুদ্ধবিরতি ও বন্দি বিনিময় হয়।
কিন্তু মাত্র দুই মাস পর, ১৮ মার্চ, ইসরাইল যুদ্ধবিরতির শর্ত লঙ্ঘন করে আবার গাজায় হামলা শুরু করে—যার ফলে দেশটির অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংকট আরও ঘনীভূত হয়েছে।
তুরস্ক, সৌদি ও পাকিস্তানসহ অন্যান্য দেশ নিয়ে ইসলামি সেনাবাহিনী গড়ার উদ্যোগ নিয়েছে ইরান। আপনি কি এই আর্মি গঠনের পক্ষে?