বাংলাদেশ ব্যাংক নতুন উদ্যোক্তাদের সহায়তায় ৮০০ থেকে ৯০০ কোটি টাকা অর্থমূল্যের একটি বিশেষ তহবিল গঠনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত ‘বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট সামিট–২০২৫’-এর স্টার্টআপ কানেক্ট সেশন–এ আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি বলেন, “এই তহবিলের অর্থ বাণিজ্যিক ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে এবং শুধুমাত্র স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোকে মূলধন জোগান দিতে তা ব্যবহার করা হবে। এ বিষয়ে শিগগিরই একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হবে।”

স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ (আইসিটি) এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)–এর যৌথ আয়োজনে এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। দেশের দ্রুত অগ্রসরমান স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম এবং বৈশ্বিক বিনিয়োগ সংযোগ জোরদারে এ আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন দেশি–বিদেশি তরুণ উদ্যোক্তাসহ উদ্ভাবনী মনের বহু অংশগ্রহণকারী। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড–এর স্বাধীন পরিচালক তানভীর আলী। প্রবন্ধে তিনি বলেন, “বাংলাদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর মধ্যে উদ্ভাবনের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, তবে তুলনামূলকভাবে এখনো এই খাতে বিনিয়োগ কম।”

প্যানেল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব, বিডা’র নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন এবং আইসিটি সচিব ও স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড–এর চেয়ারম্যান শীশ হায়দার চৌধুরী। আলোচনা পর্ব পরিচালনা করেন শেয়ার ট্রিপের সিইও সাদিয়া হক।

আলোচনায় গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেন, “বাংলাদেশে ভবিষ্যতে বিকাশ–এর মতো অন্তত ১০টি ইউনিকর্ন কোম্পানি গড়ে উঠতে পারে—এমনটাই আমরা প্রত্যাশা করি।”

শীশ হায়দার জানান, অন্তর্বর্তী সরকার একটি ‘ফান্ড অফ ফান্ডস’ গঠনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, যেখানে বিভিন্ন উৎস থেকে বিনিয়োগ সংগ্রহ করে তা প্রারম্ভিক ও প্রবৃদ্ধি পর্যায়ের স্টার্টআপগুলোকে সহায়তা প্রদান করা হবে। এর মাধ্যমে উদ্যোক্তারা ব্যবসা সম্প্রসারণ, আন্তর্জাতিকীকরণ ও টেকসই হওয়ার সুযোগ পাবেন।

তিনি বলেন, “স্টার্টআপ কানেক্ট ২০২৫ হচ্ছে এমন একটি উদ্যোগ, যা বাংলাদেশকে একটি বৈশ্বিক উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তাবান্ধব হাবে পরিণত করার অঙ্গীকারকে তুলে ধরে।”

বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন বলেন, “নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো ট্রেড লাইসেন্স পেতে হয়রানি ও বারবার নবায়নের জটিলতা। সরকারি লাল-ফিতার দৌরাত্ম্য অনেক সময় তাদের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দেয়।”

তিনি আরও জানান, ৪০টি দেশের ৫০০–এর বেশি বিদেশি বিনিয়োগকারী এই সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। তাদের চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ–এর অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো পরিদর্শনে নেওয়া হবে।

চৌধুরী আশিক বলেন, “বাংলাদেশে উদ্ভাবনী উদ্যোক্তার কোনো ঘাটতি নেই, কিন্তু মূলধনের সংকটে অনেকেই এগোতে পারেন না। এই কারণেই বাংলাদেশ ব্যাংক এই বিশেষ স্টার্টআপ তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।”