জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক ও এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম একটি ফেসবুক পোস্টে ছাত্রশক্তি গঠন প্রক্রিয়া, শিবিরের ভূমিকা, বিএনপির সঙ্গে জাতীয় সরকার প্রস্তাব এবং একটি ব্যর্থ সামরিক ক্যু চেষ্টার বিষয়ে বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ করেছেন। একইসঙ্গে তিনি শিবির নেতা সাদিক কায়েম বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ তুলেছেন।
জাতীয় সরকার প্রস্তাব নিয়ে বিএনপির বক্তব্য প্রত্যাখ্যান
নাহিদ বলেন, সম্প্রতি বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন—ছাত্রদের পক্ষ থেকে তাদের কাছে কোনো জাতীয় সরকার প্রস্তাব যায়নি। এই বক্তব্যকে ‘মিথ্যা’ আখ্যা দিয়ে নাহিদ জানান, ৫ আগস্ট রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পক্ষ থেকে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে অন্তর্বর্তী জাতীয় সরকার গঠনের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এর পরপরই তারেক রহমানের সঙ্গে ভার্চুয়াল বৈঠকে ছাত্ররা জাতীয় সরকার ও নতুন সংবিধানের সুপারিশ তুলে ধরে, যেখানে ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে প্রস্তাব করা হয়। কিন্তু তারেক রহমান সে প্রস্তাবে রাজি হননি এবং বিকল্প হিসেবে নাগরিক সমাজ দিয়ে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের পরামর্শ দেন।
শিবির প্রসঙ্গে সাদিক কায়েমের দাবিকে ‘মিথ্যাচার’ বললেন নাহিদ
সম্প্রতি এক টকশোতে সাদিক কায়েম দাবি করেন, ছাত্রশক্তি গঠনে শিবিরের ভূমিকা ছিল এবং তাদের নির্দেশেই আন্দোলন পরিচালিত হয়েছে। এই বক্তব্যকে সম্পূর্ণ মিথ্যা আখ্যা দিয়ে নাহিদ বলেন, ছাত্রশক্তি গঠিত হয়েছিল ‘গুরুবার আড্ডা’ পাঠচক্র, ঢাবি ছাত্র অধিকার থেকে পদত্যাগকারী একটি অংশ ও জাবির একটি স্টাডি সার্কেলের যৌথ উদ্যোগে। শিবিরের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল, কিন্তু তারা রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত প্রক্রিয়ায় যুক্ত ছিল না।
তিনি আরও বলেন, “সাদিক কায়েম কখনোই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক ছিলেন না। তিনি ৫ আগস্টের পর থেকে এই পরিচয় ব্যবহার করছেন। প্রেস ব্রিফিংয়ে বসার সুযোগ দেওয়া হয়েছিল কেবল শিবিরের অংশগ্রহণের কারণে, নেতৃত্বের কারণে নয়।”
২ আগস্ট রাতে ব্যর্থ সামরিক ক্যু পরিকল্পনার অভিযোগ
সবচেয়ে বিস্ফোরক অংশে নাহিদ ইসলাম অভিযোগ করেন, ২০২৪ সালের ২ আগস্ট রাতে জুলকারনাইন সায়ের ও তার ঘনিষ্ঠরা সামরিক বাহিনীর একটি অংশকে ব্যবহার করে ক্ষমতা গ্রহণের পরিকল্পনা করেছিল। এ জন্য ‘সেইফ হাউজে’ থাকা ছাত্রনেতাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয় যেন তারা ওই রাতেই একদফা ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে সরকারের পতন দাবি করে এবং মূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে।
নাহিদ বলেন, “আমাদের অবস্থান ছিল স্পষ্ট—সেনাবাহিনীর হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া যাবে না। তাহলে আরেকটা এক-এগারো হবে, এবং আওয়ামী লীগ ফিরে আসার সুযোগ পাবে। আমরা গণতান্ত্রিক উপায়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে মিলে সামনে এগোতে চেয়েছি।”
তিনি দাবি করেন, ৫ আগস্টের পরও সায়ের গং একাধিকবার ছাত্রনেতাদের বিরুদ্ধে বিকল্প নেতৃত্ব দাঁড় করাতে চেয়েছে, যার অন্যতম হাতিয়ার ছিল সাদিক কায়েম। তাদের মাধ্যমে চরিত্রহনন, কল রেকর্ড ফাঁস, নজরদারি, অপপ্রচার—সবকিছুই চলছে।
নাহিদের ভাষায়, “মিথ্যার ওপর কেউ বেশিদিন টিকে থাকতে পারে না। এরাও পারবে না।”